বন বিভাগের কি কিছু করার ক্ষমতা নেই

দেশের বনাঞ্চল দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বনভূমি চরমভাবে হুমকির মুখে। সেখানে বন বিভাগও দখলদার ও বনখেকোদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা করে দায় শেষ করছে তারা। আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার ফলে বনের জমি দখল ও গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে ঠিকই। এমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়। সেখানে একটি বন বিটের বেশির ভাগ জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের দখলে চলে গেছে। অবাধে গাছ কেটে বিক্রিও করে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বন বিভাগের অসহায় আত্মসমর্পণই দেখছি আমরা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কুলাউড়ার বন বিভাগের বরমচাল বিটকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯২৪ সালে। তার মানে সংরক্ষিত বন হিসেবে বন বিটটির বয়স ১০০ বছর। কাগজে–কলমে এ বিটের আয়তন ১ হাজার ৮৫০ একর। হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, এর মধ্যে বন বিভাগের দখলে আছে মাত্র ৩৫০ একরের মতো জমি। বাকি সব জমি স্থানীয় লোকজনের দখলে। এ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চললেও বন বিভাগ সেসব জমি ফেরত পায়নি। ওই জমির মধ্যে খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের দুটি গ্রামও রয়েছে।

বনের জমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি স্থানীয় লোকজন। টিলাভূমি থেকে অবাধে আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ছোট-বড় গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। টিলার ফাঁকে ফাঁকে গাছ কাটার চিহ্ন স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ট্রাকে করে সেসব কাটা গাছ পরিবহন করা হয়। এই কাজের জন্য কিছু স্থানে টিলা ছেঁটে রাস্তাও তৈরি করা হয়। গত কয়েক সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বন বিভাগের আপত্তিতে গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়। গাছ কর্তন ও বিক্রির ঘটনায় তিনটি মামলাও করেছে বন বিভাগ। কিন্তু এর আগেই হয়ে গেছে বড় ক্ষতি। 

বন বিভাগের বরমচালের বিট কর্মকর্তার বক্তব্য, বনের জমি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের ঝামেলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর কাছে আমাদের প্রশ্ন, এ ঝামেলার বিষয়টি তো নতুন নয়। এরপরও ব্যবস্থা নিতে কেন এত দেরি? সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, বনের জমি থেকে অবাধে গাছ কাটার দায় বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এখন আমরা দেখতে চাই, তদন্ত করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বন বিটটির জমি উদ্ধার ও অবশিষ্ট জমি রক্ষার জন্য বন বিভাগকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।