শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অশান্তি ঘটাচ্ছে কারা

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রামের মতো ময়মনসিংহেও বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত ছিল। এর পেছনে সমাবেশ আহ্বানকারী দলটির চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকাই বেশি বলে ধারণা করি।

যেকোনো কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জনজীবনে যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেটি দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এর অর্থ এই নয় যে তারা সমাবেশস্থলে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে অবর্ণনীয় ভোগান্তির মধ্যে ঠেলে দেবে।

অথচ ময়মনসিংহের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা এ কাজই করেছে। আর এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো অদৃশ্য শক্তির আবির্ভাবও প্রত্যক্ষ করলাম। পূর্বঘোষণা ছাড়াই ময়মনসিংহগামী সব বাস, মিনিবাস, ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা।

আর মোড়ে মোড়ে চেক পয়েন্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগেও দেখা গেছে, যখনই বিরোধী দল কোনো কর্মসূচি নেয়, তা ঠেকানোর জন্য সরকার নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ কাজ যে কেবল বর্তমান সরকারের আমলে হয়েছে, তা নয়। বিএনপি সরকারের আমলেও বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকাতে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। এখনো প্রতিবাদ করি।

বিরোধী দলের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার বিষয়টি ছিল আরও উদ্বেগজনক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কেবল বাধাই দেননি, বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন—এ সন্দেহে গফরগাঁওয়ে এক শ্রমিককে কুপিয়ে জখম করেছেন। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা ওই শ্রমিক সহযোগীদের নিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। রাজনীতির নামে কি এ নিষ্ঠুরতা চলতে পারে? আইন রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীরা কী করেছেন? বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের এ অশান্তি সৃষ্টি কেন?

স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এ সমাবেশও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে; কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। কর্মসূচি করতে না দিলে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই পড়ত। বিএনপি সমাবেশ করে তাদের কথা জনগণকে বলবে, আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য দলও তাদের কথা বলবে। এতে বাধা দেওয়া হবে কেন?

একই সঙ্গে সব দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তঁারা এমন কিছু বলবেন না, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বাতি জ্বালিয়ে রাজপথে বিরোধী দলকে খোঁজা কিংবা ক্ষমতা ছাড়ার পর আওয়ামী লীগ নেতারা ঘরে যেতে পারবেন না বলে যাঁরা হুমকি দেন, তঁারা চান সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক। এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এবং জনগণের প্রতি যঁাদের ন্যূনতম আস্থা আছে, তঁারা এসব কথা বলতে পারেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাতে কেন সমাবেশস্থলে ছিলেন! পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা পরদিন যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে তাঁর এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেনে গেছেন যে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে, তখন কাঁথা-বালিশ নিয়ে আগের রাতে সমাবেশস্থলে না গিয়ে তাঁদের উপায় কী?

ময়মনসিংহে ছিল বিএনপি–ঘোষিত দ্বিতীয় বিভাগীয় গণসমাবেশ। এরপর আরও সমাবেশ আছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সেসব সমাবেশও নির্বিঘ্ন হোক, এটাই প্রত্যাশিত। কথার জবাব কথায়, সমাবেশের জবাব সমাবেশ দিয়ে হোক। নিষেধাজ্ঞা জারি কিংবা অবরোধ আরোপ করে নয়।