জরুরি বিষয়ে সরকার কেন উদাসীন

সম্পাদকীয়

সংবাদ সম্মেলন করে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আহাজারি ও রাস্তা বন্ধ করে আহত ব্যক্তিদের বিক্ষোভ প্রমাণ করে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের প্রতি যে দায়িত্ব ছিল, সরকার তা যথাযথভাবে পালন করেনি।

গত শনিবার শহীদ পরিবারের স্বজনেরা সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় স্বীকৃতি, প্রতিটি শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারকাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা সুচিকিৎসার দাবিতে রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবন থেকে শুরু করে টিবি হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন। অভিযোগ, সরকার কথা দিয়েও তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি।

শহীদ পরিবার কেন্দ্রীয় গ্রুপের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন। তঁাদের মধ্যে এমন পরিবারও আছে, যাঁদের হারানো মানুষটি ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম সদস্য। যাঁরা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিলেন, তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং যঁারা আহত হলেন, তাঁদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার নির্লিপ্ত থাকবে, সেটা ভাবা যায় না। 

শহীদ পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে তঁারা অনশন ও রাজপথে কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রায় প্রতিদিনই সরকারের নীতিনির্ধারকেরা রাষ্ট্রের নীতি–পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন, শহীদদের আত্মত্যাগের কথা তাঁরা স্মরণ করছেন। কিন্তু সরকারের নীতি ও পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। না হলে কেন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পরও শহীদ পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করবেন, আহতরা কেন সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করবেন? সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য। এ কাজে তঁাদের গড়িমসি ও আমলাতান্ত্রিকতার সমালোচনা কম হয়নি। 

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হাফিজুর রহমানের স্ত্রী বীথি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বয়স আট বছর, অন্যজনের তিন বছর। বড় মেয়ে আগে একটি স্কুলে পড়ত। স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটে পড়ে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। এখন তাঁর পরিবারকে দেখার কেউ নেই। ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে শহীদ হওয়া শাহরিয়ার খান আনাসের নানা সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘এই সরকার তো আমাদের সরকার। অথচ আমাদের সরকার আমাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছে না।’

তিন মাস আগেও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা রাজপথে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসার দাবিতে। সে সময়ে একাধিক উপদেষ্টা তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলেন। এরপর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার কিছুটা তৎপর হলেও সবাই যে চিকিৎসা পাননি, রাজপথে বিক্ষোভই তার প্রমাণ। শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আন্দোলনের ছয় মাস পরও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে না পারা কিংবা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সুবিধা না দিতে পারার ব্যাখ্যা কি সরকারের কাছে আছে? কেন বারবার তাঁদের দাবি জানাতে রাস্তায় নামতে হবে?

আমাদের প্রত্যাশা, সরকার অবিলম্বে শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেবে এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে সরকার আইনি প্রক্রিয়ার যুক্তি সামনে আনতে পারে কিন্তু শহীদ পরিবারের সহায়তা কিংবা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়ে কি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে?