সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা দরকার

সম্পাদকীয়

আমরা যখন একটা বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছি, তখন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৪৮৬ নারী ও শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ১১ মাসে ২ হাজার ৩৬২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬। সহিংসতার মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতন, উত্ত্যক্ত করা, অপহরণ, বাল্যবিবাহ রয়েছে। এ পরিসংখ্যানই বলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট যে আমাদের সমাজে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেননা, ঘরে–বাইরে নারী ও কন্যারা প্রতিনিয়ত যে সহিংসতার মুখোমুখি হন, তার বিশাল অংশটাই সংবাদমাধ্যমের খবরে আসে না।

বাংলাদেশের সমাজের অগ্রগতি, বিশেষ করে অর্থনীতিতে নারীর অবদান দিনে দিনে বাড়ছে। মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ হলেও, গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে (এসএনএ) যোগ করা গেলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ।

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কিন্তু বিচারহীনতা, ভয় ও ক্ষমতার সংস্কৃতি সমাজে যেভাবে গেড়ে বসেছে, তাতে করে সহিংসতার বেশির ভাগ ঘটনায় বিচারের বাইরে থেকে যায়। আর ভয় ও ক্ষমতার শিকল ভেঙে যেসব ভুক্তভোগী আদালতের দ্বারস্থ হন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় তাঁরাও ন্যায়বিচার থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হন।

লিখিত বক্তব্যে সংস্থাটি বলেছে, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে অনেক আইন ও নীতিমালা হওয়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে বহুমুখী কর্মসূচি রয়েছে। এরপরও বাস্তবিক অর্থে সামাজিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

আমরা মনে করি, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা সবার আগে। শুধু আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করলেই চলবে না, নারীর প্রতি কোথাও যেন বৈষম্যমূলক আচরণ না করা হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সে ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাঁরা থাকেন, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকল থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।

শুধু রাষ্ট্রের নয়—সমাজ, পরিবার ও সংগঠনগুলোরও এ ক্ষেত্রে বড় দায় আছে এবং নারীর প্রতি সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে আরও বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের মানুষের সম্মিলিত চেষ্টাই পারে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে।