প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা কেন

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকার খালগুলো কেমন আছে, তা স্পষ্ট করে কিছু বলার নেই। এসব খালের তদারককারী প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের ভূমিকাও কতটা কার্যকর, তা আরও বেশি প্রতীয়মান সবার কাছে। এরপরও বলতে হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে তাদের এলাকার খালগুলো নিয়ে যতটা মনোযোগ দিতে দেখা যায়, সে তুলনায় পিছিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফলে দক্ষিণ সিটির খালগুলোর অবস্থা খুবই করুণ হয়ে পড়েছে। খালগুলো আর খাল নেই, হয়ে পড়েছে ঘাস চাষের মাঠ ও ময়লার ভাগাড়। ফলে এবারের বর্ষাকালেও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির চারটি খাল কালুনগর, জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুরের বেশির ভাগ এলাকা এখন বর্জ্য, আগাছা ও কচুরিপানায় ভরা। খালগুলোর কিছু কিছু অংশ থেকে বর্জ্য সরানো হলেও পানিপ্রবাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। অথচ এ চার খাল সংস্কারের জন্য ২০২২ সালে প্রায় ৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দুই বছর পার হয়ে গেলেও সেই প্রকল্পের কাজ এখনো মাঠপর্যায়ে শুরু হয়নি। এখন প্রকল্পের কাজের জন্য খালগুলোর নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব খালের এমন অবস্থা হয়েছে।

গত বছর বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিতে অন্তত ছয়বার ডুবেছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল রাজধানীতে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বড় একটি অংশ দীর্ঘ সময় পানির নিচে ডুবেছিল। এরপরও টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। এখন আবার বর্ষা আসতে চলেছে। এবার বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা। সেই আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, তাহলে এবার গতবারের চেয়ে আরও বেশি জলাবদ্ধতা তৈরি হবে, নগরবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়বে।

শুষ্ক মৌসুম শেষ হতে আর বেশি দেরি নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন খাল সংস্কারের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কবে শুরু করবে, কবেই–বা শেষ করবে? নগরবিদদের বক্তব্য, খালের বর্জ্য পরিষ্কার করা সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজের অংশ। ফলে প্রকল্পের টাকায় খাল পরিষ্কার হবে, এ ধারণা নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বর্জ্য অপসারণের কাজ বন্ধ রাখা উচিত হয়নি।

এত বড় প্রকল্প পাওয়ার পরও কেন সেটির বাস্তবায়নের কাজ পড়ে থাকল, সেটিই প্রশ্ন। তাহলে কি খালগুলো সংস্কার, দখল ও দূষণমুক্ত রাখা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কোথাও?