এ যেন অন্যায়ের অভয়াশ্রম। প্রথম আলোর খবর বলছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা মালামাল পাচারে বাধ্য হচ্ছেন। ভারত সীমান্ত থেকে তাঁদের লাগেজ ধরিয়ে দিচ্ছেন ওপারের পাচারকারীরা।
আর শূন্যরেখা পার হলে এপারে তাঁদের সহযোগীরা মালামাল বুঝে নিচ্ছেন। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়ছে। যাত্রীরা হেনস্তা হচ্ছেন। যথারীতি সরকারের একগাদা সংস্থার উপস্থিতি সেখানে আছে। তারা বরাবরের মতো অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিয়েছে এবং লোকবলের সংকটের কথা বলেছে।
প্রথম আলো হিলি স্থলবন্দরে এই সমস্যার বেশ কিছু আঙ্গিক খুঁজে পেয়েছে। যেমন পাচারকারীদের মদদদাতারা হলেন স্থানীয় প্রভাবশালীসহ শুল্ক স্টেশন ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। চেকপোস্ট এলাকায় যাত্রীদের মালামাল পারাপারে নিয়োজিত শ্রমিকদের কোনো পরিচয়পত্র নেই।
ফলে কে শ্রমিক আর কে পাচারকারী, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। বন্দর সুরক্ষার দায়িত্ব হলো বিজিবি ও আনসারের। তাদের সঙ্গে শুল্ক ও রাজস্ব বিভাগের কোনো যোগাযোগ নেই। অনিয়মের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মচারী জুয়েল হোসেনকে ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার বায়জিদ হোসেন স্বীকার করেছেন বন্দরে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এর জন্য তিনি জনবলসংকটকে দায়ী করেছেন। এই অভিযোগ প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে গৎ বাঁধা। যে জনবল আছে, তাদের প্রত্যেকে কি তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন? তাঁদের কি জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা আছে? দিনের পর দিন রাজস্ব হারানোর পর তাঁরা কি উদ্যোগ নিয়েছেন? তিনি আরও বলেন, আর্থিক সুবিধা নিয়ে লাগেজ পার্টিকে সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ অসত্য। অনিয়ম যদি কেউ করে থাকে, তাহলে অন্য বিভাগের সদস্যরা করছেন। রাজস্ব অফিসের কারও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
দেখা যাচ্ছে, এই অনিয়মে ‘প্রভাবশালী’ অংশ বিজিবি, আনসার, শুল্ক বিভাগ—কেউ কি দায় এড়াতে পারে? পাচারকারীদের মদদদাতা ‘প্রভাবশালী’রা কারা? তাদের পরিচয়, পদপদবি কী? তাঁদের আইনের আওতায় আনা কতটা কঠিন? তারা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? বিজিবি, আনসার কেন পাচারকারীদের দেখেও না দেখার ভান করছে?
সংবাদ সংগ্রহের সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মচারী কেন লাগেজ পার্টির লোকজন লেলিয়ে দিলেন, তার বিচার কি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করবেন? প্রভাবশালী গোষ্ঠী, পাচারকারী বা লাগেজ পার্টি, আর সরকারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সাধারণ মানুষের দম আটকে আসে। সর্বব্যাপী এই অরাজকতার অবসান হোক। সরকারকে বলব, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।