গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়

পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। পুরোনো আবাসভূমি ও জমিজমা টিকিয়ে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। সিলেটের খাসিয়াপুঞ্জি কিছুদিন পরপর খবরের শিরোনাম হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার খাসিয়ারা নতুন করে জীবন ও জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন। সেখানে একটি চা-বাগানকে যেভাবে ভূমি ইজারা দেওয়া হয়েছে, তাতে খাসিয়াদের প্রথাগত জীবনধারা ও অস্তিত্বের বিষয়টি গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে রবারবাগান আর সিলেটে চা-বাগান, ভূমি ইজারা দেওয়ার এমন নীতির কারণে উভয় অঞ্চলেই তৈরি হয়েছে এমন সংকট। এ নিয়ে নানা সময়ে প্রতিবাদ উঠলেও স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টিকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন।  

গত বৃহস্পতিবার কুলাউড়া পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশ করেছেন সেখানকার বিভিন্ন খাসিয়া ও গারোপুঞ্জির পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ। সেই সমাবেশে সমর্থন ও সহযোগিতা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনসহ মোট ১২টি সংগঠন।

এই নাগরিক সমাবেশ থেকে আমরা জানতে পারছি, খাসিয়াদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে একটি চা-বাগানের পক্ষে ছয় শতাধিক একর ভূমির ইজারা নবায়ন করেছে সরকার। ওই ভূমির মধ্যে একটি খাসিয়াপুঞ্জিও পড়ে যায়। সেই পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবার থাকে। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করছে। এখন চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-বাগান সম্প্রসারণের নামে ওই ভূমির দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়বে খাসিয়াপুঞ্জিটিও।

খাসিয়ারা বন-প্রকৃতিকে ভালোবাসে। বন-প্রকৃতিকে ঘিরেই তাদের জীবন-জীবিকা। তারাই বন-প্রকৃতিকে মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে যত্ন করে। কিন্তু কখনো সামাজিক বনায়ন, কখনো চা-বাগানের সম্প্রসারণের নামে সেই বন-প্রকৃতিতে বারবার আঘাত হানা হচ্ছে। এটি শুধু খাসিয়াদের ওপর নয়, আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপরেও আঘাত।

সমাবেশে বক্তারা চা-বাগানের ভূমি ইজারা বাতিল, সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভোগদখলীয় ভূমিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ না করা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, খাসিদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা প্রদানসহ আরও কিছু দাবি জানিয়েছেন। খাসিয়া ও গারো জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার্থে এসব দাবি পূরণ অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।

প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জাতিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা না করে ভূমি ইজারা ও সামাজিক বনায়ন কেন? এর মাধ্যমে ভূমি দখলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কাদের? আমরা আশা করব, কুলাউড়ার খাসিয়াপুঞ্জিটি রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সদিচ্ছার প্রমাণ দেবে।