জরাজীর্ণ ঘরগুলো দ্রুত সংস্কার করুন

সম্পাদকীয়

দেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বসতভিটা হারিয়ে অনেক মানুষ গৃহহীন। এসব মানুষের জন্য বড় আশা হয়ে এসেছিল সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প। গোটা দেশে বাস্তবায়িত এ প্রকল্প প্রশংসা কুড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেক জায়গায় সুফলভোগী মানুষের আশাভঙ্গ হয়েছে বললে ভুল হবে না। সুযোগ-সুবিধার অভাব ও বেহাল ঘরবাড়ির কারণে অনেক আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে যাচ্ছে মানুষ। বিষয়টি দুঃখজনক।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের বড় উদাহরণ হতে পারে খুলনার কয়রা এলাকা। সেখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতভিটা হারানো ৪৫০ পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল তিনটি গুচ্ছগ্রাম। চার বছর আগে গ্রামগুলোতে বসবাসও শুরু করে পরিবারগুলো। কিন্তু এরপর পরিবারগুলো একের পর এক ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। কারণ, মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও সেখানে নেই বসবাসের উপযোগী পরিবেশ। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, চলাচলের রাস্তা ও বিদ্যুৎ-সংযোগ।

দেশের নানা জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের জীর্ণদশা নিয়মিতই খবরের শিরোনাম হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোয়। সবখানে একটি চিত্র বেশির ভাগ দেখা যায়, যেমন সংস্কারের অভাবের কারণে ভিটার মাটি ধসে পড়া, ঘর জরাজীর্ণ হয়ে পড়া, দরজা-জানালা ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। কয়রার সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামে, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামে এবং বাগালী ইউনিয়নের শেওড়াপাড়া গ্রামের তিন গুচ্ছগ্রামে একই পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রথম আলোয় এসব গুচ্ছগ্রামের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের হতবাক করে। এমন পরিবেশে কী করে মানুষ বসবাস করতে পারে!

প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়হীন হওয়া মানুষগুলো গুচ্ছগ্রামে এসেও রেহাই পায় না। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আম্পান ও ইয়াসের কবলে পড়ে তারা। দীর্ঘদিন নদীর পানিতে ডুবে ছিল ঘরগুলো। দীর্ঘদিন জোয়ারের পানি ওঠানামা করায় ঘরের মাটি ধুয়ে নদীতে চলে গেছে। ফলে মঠবাড়িয়া গুচ্ছগ্রামের ১৭০টি ঘরের ১০২টি ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে। শেওড়াপাড়া গুচ্ছগ্রামের ৬০টি ঘরের মধ্যে ৪২টি ঘরের মানুষ অন্য স্থানে চলে গেছেন। গোবরা গুচ্ছগ্রামের ২২০টি ঘরের ২২টি ঘরে কেউ বসবাস করেন না।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন জানান, ‘গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের কাজ শুরু করতে কয়রা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বলা হয়েছে। কয়রার গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের দুরবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।’ তবে গুচ্ছগ্রামের অবশিষ্ট বাসিন্দাদের মত হচ্ছে, এর চেয়েগ্রামের গরুর ঘরও অনেক ভালো। প্রতিবছর শুধু আশ্বাস পান কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না।

প্রশ্ন হচ্ছে, সংস্কার করতে না পারলে গুচ্ছগ্রামগুলো রাখার দরকারটা কী? এখন জেলা-উপজেলা প্রশাসন কী করে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।