অনুমোদনহীন নৌযান কেন চলছে

সম্পাদকীয়

দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। বছরের কয়েক মাস বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এ সময় জাহাজ ছাড়াও ট্রলার, নৌকা ও স্পিডবোট দিয়ে পর্যটকেরা চলাচল করেন। পর্যটন মৌসুম শেষে বছরের অন্যান্য সময় দ্বীপবাসীর ভরসা হচ্ছে এসব ট্রলার ও স্পিডবোট। কিন্তু এসব নৌযান, বিশেষ করে স্পিডবোটের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পর্যটক ও দ্বীপবাসী নিয়মিত ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

স্পিডবোটের মালিক ও চালকদের দৌরাত্ম্যের কাছে পর্যটক ও দ্বীপবাসী একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছেন। বাড়তি ভাড়া নেওয়া, ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়া, ইঞ্জিন নষ্ট বা জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার অজুহাতে মাঝপথে যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এ ছাড়া এসব স্পিডবোটের কোনো অনুমোদন নেই। নেই কোনো ফিটনেস সনদও। চালকদের আলাদা করে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনাও। গত শুক্রবার এমন এক দুর্ঘটনায় দ্বীপের একজন নারী ডুবে মারা গেছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে স্পিডবোটটি রওনা দেয়। এতে চালক ও সহকারী ছাড়াও ২২ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৭ জন পর্যটক ও ৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা। মাঝপথে ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে স্পিডবোটটির তলা ফেটে যায় এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়। এ সময় কোস্টগার্ডের একটি টহল দল ও অপর একটি স্পিডবোট এসে যাত্রীদের উদ্ধার করে। তবে এক যাত্রী নিহত হন। তিনি সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনে নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোটের অধিকাংশই পুরোনো। সরকারের কোনো দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই এসব স্পিডবোট চলাচল করে আসছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। অনেক সময় ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক ভাড়া আদায় করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ৩৩ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে একটা স্পিডবোটের কয় লিটার জ্বালানি লাগে?

ফলে এই ভাড়া কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। যার কারণে দ্বীপবাসী এটিকে নাম দিয়েছেন গলাকাটা সার্ভিস। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা স্পিডবোটের মালিকদের মদদ দিচ্ছেন, নিজেরাও মুফতে চলাচলের সুযোগ গ্রহণ করছেন।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে এসব জানে না, তা নয়। কিন্তু স্পিডবোটগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা। তার মানে কি তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় অনুমোদনহীনভাবে এসব স্পিডবোট চলতে পারছে? সেন্ট মার্টিনে স্পিডবোট চলাচলে এসব অনিয়ম বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জোরালো ভূমিকা দেখতে চাই। নয়তো স্পিডবোট দুর্ঘটনার দায় তঁাদেরই নিতে হবে।