চুরি চিহ্নিত হয়েছে, চোরদের ধরুন

সম্পাদকীয়

প্রবীণদের কল্যাণে ১৯৬০ সালে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম) নামে যে সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সেটি এখন দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। লোকবল নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রবীণদের খাবার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় অবাধ দুর্নীতি চলছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে পরিচালনা কমিটি বাদ দিয়ে সরকার সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

এ প্রতিষ্ঠানের পদাধিকারীদের দুর্নীতির দাপট এতই বেশি যে ভুক্তভোগীরা এত দিন প্রতিবাদও করতে সাহস পাননি। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সরকার–গঠিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বাইগামের আর্থিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের পাশাপাশি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এমনই বিস্ময়কর ক্ষমতার অধিকারী যে তাঁরা একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে দিয়ে এক বেলা আধা কেজি খাসির মাংস ও আধা কেজি মুরগির মাংস খাওয়ানোর বিল তুলে নিয়েছেন। সস্তা দেশীয় শালকে কাশ্মীরি শাল বলে চালিয়ে দিয়েছেন।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির দায় কেউ নিতে চাইছেন না। পরিচালনা কমিটি কর্মকর্তাদের দোষারোপ করছে। আর কর্মকর্তারা দায় চাপাচ্ছেন পরিচালনা কমিটির ওপর। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাকি পড়েছে।

কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মো. মোকতার হোসেনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত পরিচালনা কমিটি।

প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাসভবনে ১৯৬০ সালে বাইগাম গড়ে তোলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল অত্যন্ত মহৎ।

বর্তমানে আগারগাঁওয়ে প্রবীণ ভবনে হাসপাতাল ও পাশে একটি ভবনে প্রবীণ নিবাস রয়েছে। নিবাসে বাসিন্দা আছেন ৩৬ জন। হাসপাতালটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রসহ প্রবীণদের জন্য জরুরি অনেক কিছুই নেই।

প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১০ লাখ টাকা। এ অর্থ থেকে কর্মরতদের বেতন ও ঢাকার বাইরের ৯২টি শাখায় অনুদান দেওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন অনিয়মের ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় করেনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার। মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭। অর্থাৎ দেশে প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে।

জনগণের করের অর্থে পরিচালিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে এভাবে যথেচ্ছ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম চলতে পারে না। সরকার নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে, এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানটির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। যাঁরাই দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তঁাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে চুরি যখন চিহ্নিত হয়েছে, চোরদেরও ধরুন।