তিন মাস ধরে ভাতা না পেয়ে যে সোয়া কোটি উপকারভোগী খুবই কষ্টে আছেন, এটা সরকারের নীতিনির্ধারকেরা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে মনে হয় না। ভাতাভোগীদের মধ্যে অসহায় বিধবা, বয়স্ক নারী-পুরুষ, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, হিজড়া জনগোষ্ঠী ও সামাজিকভাবে অনগ্রসর মানুষও আছেন।
সাধারণত তিন মাস পরপর তাঁরা এ ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁরা কোনো ভাতা পাননি। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, মাঠপর্যায়ে অনেক জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রকৃত ভাতাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হচ্ছে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অনেক জনপ্রতিনিধি পলাতক। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা।
ভাতাভোগীর তালিকা ঠিক করতে প্রতিটি ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে কমিটি আছে। জনপ্রতিনিধিরা হবেন কমিটির সভাপতি। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কমিটি না থাকলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সভাপতি করার বিধান আছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধির পক্ষে কাজটি করা যত সহজ, উপজেলা সদরে বসে সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তিনি তো এলাকার মানুষকে চেনেন না। এ ছাড়া আট জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) না থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ভাতাভোগীদের তালিকা তৈরিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৬০ লাখ লোক; মাথাপিছু মাসিক ভাতা পান ৬০০ টাকা। বিধবা ভাতা পান প্রায় ২৮ লাখ জন; মাথাপিছু ভাতা ৫৫০ টাকা। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৩২ লাখ মানুষ; মাথাপিছু ভাতা ৮৫০ টাকা। হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ১৩ লাখ মানুষ; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৬০০ টাকা। বেদে জনগোষ্ঠীর ৬ হাজার জন ভাতা পান; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ৬০ হাজার মানুষ; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
ওপরের তালিকা অনুযায়ী জনপ্রতি উপকারভোগীর ভাতার পরিমাণ খুবই কম। একজন বিধবার মাসে ৫৫০ টাকায় এবং একজন প্রতিবন্ধীর ৮৫০ টাকায় চলা অসম্ভব। তারপরও যদি সেই টাকা তিন মাস ধরে বন্ধ থাকে, তাঁদের না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই।
আগের সরকারের করা তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হলে অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করবে। কিন্তু সেই তালিকা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তো ভাতাভোগীরা বঞ্চিত থাকতে পারেন না। সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, চলতি বাজেটে ভাতাভোগীদের জন্য ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, সেটা নিয়ে ভাতাভোগীদের মাথাব্যথা নেই। তঁাদের একমাত্র চিন্তা হলো কবে টাকাটা পাবেন।
আসলে গরিব ও দুস্থ মানুষের কথা কেউ ভাবেন না। ইতিমধ্যে ভাতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। সেটা বাড়তে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম প্রান্তিকের ভাতা ছাড় করা হবে। যে প্রকল্পের সঙ্গে ১ কোটি ২৫ লাখ গরিব ও অসহায় মানুষ জড়িত, সেই প্রকল্প যদি ও কিন্তু দিয়ে চলতে পারে না। জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি কর্মকর্তা যঁাদের মাধ্যমেই তালিকা হোক না কেন, অবিলম্বে সেটি চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে ভাতা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হোক।