ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে কেন বিরোধ

সম্পাদকীয়

নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষের খবর এ দেশে নতুন কিছু নয়। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনেও বিপুল হতাহতের ঘটনা আমরা দেখতে পেয়েছি, যেখানে শিশুর প্রাণহানিও হয়। সামনের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি ও রক্তাক্ত সংঘর্ষে মুখোমুখি সরকার ও বিরোধী দল। এর মধ্যে এমন এক নির্বাচন ঘিরে এক বিদ্যালয়শিক্ষার্থীর মৃত্যু খবরের শিরোনাম হলো, যাতে আমাদের হতবাক হতে হয়। বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলা বা মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেটি এখন এমন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে যে তাতে প্রাণ হারাতে হলো একজন শিক্ষার্থীকেই। রংপুরের পীরগঞ্জে মদনখালী ইউনিয়নে খেতাবেরপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন ঘিরে গত সোমবার দুপুরে সংঘর্ষে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ সময় পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচন হয়েছে আগেই। নির্বাচিত সভাপতিকে মেনে নেওয়া না–নেওয়া ঘিরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। দুর্গাপূজা ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)–এর ছুটির পর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনই দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা থেকে এ সংঘর্ষ ঘটে। ক্লাস চলাকালে এ ঘটনা ঘটে বলে শিক্ষার্থীরা সেই সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী অভিভাবক ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।

মানুষ গড়ার কারিগর বলতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথাই সবার আগে মনে পড়ে আমাদের। যার কারণে বিদ্যালয়জীবনের শিক্ষকদের প্রতি সারা জীবন শ্রদ্ধাশীল থাকে শিক্ষার্থীরা। অথচ সেই শিক্ষকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারাতে হলো শিক্ষার্থীকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যই ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকার বিধিবিধান চালু করে সরকার। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনা কমিটি বিদ্যালয়ে নানা প্রভাব বিস্তার, নিয়োগ–বাণিজ্য, সম্পত্তি বেদখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। সেখানে যুক্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষকেরাও। যেমনটি আমরা দেখতে পাই নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দক্ষিণধরু উচ্চবিদ্যালয়েও। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরোধ সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি করে। যার ভুক্তভোগী হয় অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে গত মাসে আমরা একটি সম্পাদকীয় লিখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন দ্বন্দ্ব ও বিরোধে স্থানীয় রাজনীতি এবং প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য থাকলেও সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। বিদ্যালয়ের পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং এর নির্বাচন নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।