শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার সংকট বাড়াবে

সম্পাদকীয়

ঢাকায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটল, তার মধ্য দিয়ে রাজনীতি আবার সংঘাতের দিকে গেল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেটি কারও কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। গতকালও হরতালে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বাস্তবতায় জনমনে এই শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে যে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান না হলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কবলে পড়তে পারে দেশ।  

ডলার-সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের নিম্নমুখী অবস্থা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ বাস্তবতায় সংঘাতময় রাজনীতির চাপটা অর্থনীতি কতটা নিতে পারবে, সেটাই এখন দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকারদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

কোভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি অনিশ্চয়তার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সহিংসতা এবং হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলতে থাকলে অর্থনীতির সংকট আরও গভীরতর হবে। তাতে সাধারণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে। রাজনীতিবিদদের অবশ্যই এই উপলব্ধিতে আসতে হবে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

শনিবারের সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ, সাংবাদিক, বিএনপির কর্মী, পথচারীসহ অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। রোববারও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় হরতাল–সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে হরতাল চলাকালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ সদস্যকে হত্যা এবং অন্যান্য সহিংসতায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের শনাক্ত করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু সেটা যেন কোনোভাবেই বিরোধী রাজনীতিবিদদের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় তল্লাশি ও অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সারা দেশেও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শীর্ষ নেতৃত্বসহ নেতা-কর্মীদের এভাবে হরেদরে গ্রেপ্তার শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতার পরিবেশকে নষ্ট করবে। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিক পন্থায় সমাধানের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস দীর্ঘ। নিকট অতীতে ২০০৬, ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচনের আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতা রাজনীতির জন্য শেষ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সমাধান আনতে পারেনি, সংকট বাড়িয়েছে বহুগুণ। সরকারকে মনে রাখতে হবে, পরপর দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আজকের এই সংকট।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর চাপ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র দুই মাস বাকি যখন, সে সময়ে বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করল।

সংঘাত, সহিংসতা, হরতাল কিংবা শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বদের গ্রেপ্তার নয়; আলাপ-আলোচনা, সংলাপই রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ।