যবিপ্রবি প্রশাসন সমস্যার সমাধান করুক

সম্পাদকীয়

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আট মাস আগে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১০ তলা ওই ভবনে লিফট স্থাপন করা হয়নি। ফলে ওঠানামা করতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ১৯ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সামনেই বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে তাঁরা মন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়ান।

যবিপ্রবির নবনির্মিত ভবনে লিফট নিয়ে হাঙ্গামার খবর নতুন নয়। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও ছাপা হয়েছে। ওই সব খবর বলছে, বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় ১৪টি লিফট স্থাপনের জন্য দরপত্র ডেকেছিল। সর্বনিম্ন দরদাতাকে এড়িয়ে গত বছরের এপ্রিলে কার্যাদেশ দেওয়া হয় প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে।

শর্ত অনুযায়ী তাদের মেশিনরুম টাইপ লিফট সরবরাহের কথা ছিল, কিন্তু তারা মেশিনরুম লেস টাইপ লিফট দিয়েছে। কারণ, মেশিনরুম লেস টাইপ লিফটের দাম কম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় লিফট বুঝে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি সেগুলো গ্রহণ করেনি। বিষয়টি এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে গড়িয়েছে। দুদক এই অভিযোগের নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত কি তাহলে শিক্ষার্থীরা হেঁটে রোজ ১০ তলায় ওঠানামা করবেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কী, তা তো জানাই যাচ্ছে না।

সভ্য দেশ হলে শিক্ষার্থীদের এই দুর্ভোগ নিরসনে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা ছুটে আসতেন। সভ্য দেশের আরও যে প্রথা অনুসরণীয়, তা হলো ধনকুবেরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি, গবেষণার প্রতি মায়া। এই তো ফোর্বস সেদিন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, ধনকুবের জিম সিমন্স নিউইয়র্কের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন। আমাদেরও তো ধনী লোকের অভাব নেই। তাঁদের অনেকেই এই ঠিকাদারি করেন, ব্যবসা–বাণিজ্য করে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। বড় অংশ আবার রাতারাতি জনপ্রতিনিধিও বনে গেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের কোনো দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয় না।

উল্টো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাঁরা সোনার ডিমপাড়া হাঁস বলে ধরে নিয়েছেন। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। আবাসিক হলের নিম্নমানের ভাত-ডাল খেয়ে ১০ তলা সিঁড়ি ভেঙে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে যেতে কষ্ট হচ্ছে কি না, তা নিয়ে হর্তাকর্তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, তাঁদের ছেলেমেয়েরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন না।

সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সুকুমার রায়ের ‘হিংসুটিদের গান’–এর কথা মনে করায়, ‘আমরা ফিরি বুক ফুলিয়ে রঙিন জুতোয় মচ্‌মচ্‌/ তোমরা হাঁদা নোংরা ছিছি হ্যাংলা নাকে ফচ্‌ফচ্‌...আমরা হবো লাট মেজাজী, তোমরা হবে কিপ্টে/ চাইবে যদি কিচ্ছু তখন ধরব গলা চিপ্‌টে।’

আমরা আশা করব, যবিপ্রবি প্রশাসন তাদের একাডেমিক ভবনে লিফট সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করবে।