মুক্তেশ্বরীকে হত্যার আয়োজন বন্ধ করুন

দেশের নদীগুলো হত্যা করায় অদ্ভুত এক নেশায় পেয়ে বসেছে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করেই একের পর এক সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে নৌযান চলাচলের কোনো সুযোগই রাখা হচ্ছে না। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি যশোরের মনিরামপুরে মুক্তেশ্বরী নদীর ক্ষেত্রে। সেতুর পাইল বসানোর জন্য নদীতে এমনভাবে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে, তাতেই পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সেতু বানানো হচ্ছে আবার প্রয়োজনের চেয়ে খুব কম উচ্চতা রেখে। এ সেতু নির্মিত হলে তার নিচ দিয়ে ডিঙিও চলাচল করতে পারবে না। নৌপথের জন্য এ মরণফাঁদ বানাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তালিকায় মুক্তেশ্বরী নদীটি চতুর্থ শ্রেণির। সেই হিসাবে এখানে কমপক্ষে ১৬ ফুট উচ্চতার সেতু নির্মাণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এলজিইডি তা না মেনে মাত্র ৪ দশমিক ৫৯ ফুট উচ্চতার সেতু নির্মাণ করছে। বিআইডব্লিউটিএ জানাচ্ছে, মুক্তেশ্বরী সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এলজিইডির ভাষ্য, মুক্তেশ্বরী নদীতে পানিপ্রবাহ নেই। কোনো নৌযান চলে না। তা ছাড়া সেতুর নকশা আগের। এ জন্য বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।

এলজিইডির এমন বক্তব্যে আমাদের একই সঙ্গে অবাক ও ক্ষুব্ধ হতে হচ্ছে। নকশা আগে হয়েছে বলে কি তা পরিবর্তন করা যাবে না? এর জন্য গোটা নদীটিকেই হত্যার আয়োজন করতে হবে? আর স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো কি নদীতে পানিপ্রবাহ না থাকা, নৌযান না চলার পেছনে কমবেশি দায়ী নয়? সেটিকেই কী করে উদাহরণ হিসেবে দেখায় এলজিইডি! এখন তো তারা যেভাবে সেতু নির্মাণ করছে, তাতে ভবিষ্যতে পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচলের সম্ভাবনাও বিনষ্ট করছে। এ ব্যাপারে সংস্থাটি কী বলবে? 

সম্প্রতি যশোরের আরও ১০টি সেতুর ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে, যার চারটির নির্মাণকাজই চলমান। আগেও জেলাটিতে শতাধিক সেতুর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। চলতি মাসেই প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদন জানায়, বিআইডব্লিউটিএ দেশের ৯৯ সেতুর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ৮৫টিরই উচ্চতা কম। ফলে বর্ষা মৌসুমে সেতুগুলোর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারে না। নৌপথ নিয়ে এতটা অবহেলা, পরিকল্পনাহীনতা ও অবিচার সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয় না। 

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ডিসি সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছাড়া কোনো সেতু নয়। সেটি ছাড়া কেউই যেন কোনো সেতু নির্মাণ করতে না পারে, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের তদারক করতে বলেছি।’ এখন মুক্তেশ্বরীসহ যশোরের অন্যান্য নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।