কক্সবাজারে নজরদারি বাড়ানো হোক

সম্পাদকীয়

কক্সবাজারের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত মাছের পোনা সংগ্রহের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে এখনই চিংড়ি ও মাছের পোনা সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ। যদিও এর বড় একটি অংশ হচ্ছে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের, যারা শরণার্থীশিবির থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের সৈকতসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। অবৈধ জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে প্রতিদিন ধ্বংস করা হয় অন্যান্য মাছের দুই কোটি পোনা। বিষয়টি অবশ্যই মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য উদ্বেগের।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার লম্বা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে মূলত পোনা আহরণ করা হয়। সমুদ্রসৈকতের বালুচরে হাজারের বেশি গাছের খুঁটি পুঁতে এর সঙ্গে মশারি জাল বেঁধে রাখা হয়। জোয়ারের সময় সেই জালে ঢুকে পড়ে চিংড়ির পোনা, সঙ্গে অন্যান্য প্রজাতির মাছের পোনা ও লার্ভা। ঝাউবাগানের ভেতর অবস্থান করা পোনা আহরণকারীরা সময় হলে মশারি জালে আটকে পড়া পোনাগুলো জলভর্তি পাত্রে তুলে নিয়ে যান। শুধু চিংড়ির পোনা তুলে নিয়ে অন্যান্য মাছের পোনাগুলো বালুচরে ফেলে দেওয়া হয়, যেগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা যায়।

প্রতিদিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে এভাবে দৈনিক ৫৫ লাখ চিংড়ি পোনা আহরিত হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) বলছে, একটি চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে অন্যান্য প্রজাতির ৬০-৭০টি মাছের পোনা-লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে। চিংড়ি পোনা আহরণ বন্ধ করা না গেলে সমুদ্রে মৎস্যভান্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সৈকতে চিংড়ি পোনা আহরণ, বেচাবিক্রি, সরবরাহ ও ব্যবসায় জড়িত অন্তত তিন লাখ মানুষ। এসব পোনা বিক্রির জন্য একসময় বাজার থাকলেও সেগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন নানাভাবে চিংড়ি পোনাগুলো সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কক্সবাজারে বৈধভাবে উৎপাদন করা পোনা সরবরাহের আড়ালে অবৈধভাবে ধরা চিংড়ি পোনাও দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

২০০১ সালের মৎস্য পোনা আহরণ আইনে সমুদ্র উপকূল থেকে চিংড়ি পোনা আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার বক্তব্য, সৈকতের পোনা আহরণ বন্ধে প্রায় সময় অভিযান চালানো হয়। মশারি জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করাও হয়। কিন্তু উন্মুক্ত সৈকতে ভোর ও রাতের বেলায় পোনা আহরণ চলে বিধায় তখন অভিযান পরিচালনাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। দপ্তরে জনবল-সংকটও আছে।

পোনা আহরণকারী ব্যক্তিরা যেহেতু বেশির ভাগই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের, তাদের শরণার্থীশিবিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার প্রশাসন ও শরণার্থীশিবির–সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যৌথভাবে কাজ করা। আর পোনা বেচাবিক্রি ও সরবরাহব্যবস্থাকে ভেঙে না দিলে এ ক্ষতি কোনোভাবে ঠেকানো যাবে না।