প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা চাই

সম্পাদকীয়

রাজশাহীর তানোরের গোকুল-মথুরা খেলার মাঠ সেখানকার শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ। এই মাঠ কেবল একটি খেলার জায়গা নয়, এটি এলাকার সংস্কৃতি, সামাজিক মেলবন্ধন এবং বহু প্রজন্মের স্মৃতির ধারক। অথচ এই শতবর্ষী মাঠের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা দখল করে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরকারের আরএস ও এসএ দুটি খতিয়ানেই এই মাঠ খেলার মাঠ হিসেবে উল্লেখ আছে। ২০০০ সালের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও স্থানীয় একটি মাদ্রাসা  কর্তৃপক্ষ কীভাবে কৌশলে মাঠটি নিজেদের নামে খারিজ করে নিতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মাঠসংলগ্ন গোকুল-মথুরা দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৯ সালের ৪ আগস্ট একটি দান দলিলের মাধ্যমে ৬ শতাংশ ও ওই বছরের ৮ আগস্ট একইভাবে দান দলিলের মাধ্যমে ৩৪ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে। এর আগেই ১৯৮৩ সালের ৫ জুন গোকুল-মথুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একইভাবে একটি প্রতারণামূলক দান দলিলের মাধ্যমে ৬৬ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে। এই তিনটি দলিলের মাধ্যমে অতি গোপনে মাঠের সব জমি গ্রাস করা হয়েছে। এখানে ভূমি অফিসের যোগসাজশ থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

মাঠে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন সরব হন। মানববন্ধন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান—সবকিছুই করা হয়েছে। আদালতে মামলাও করা হয়েছে এবং আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরপরও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। যদিও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা ভবন নির্মাণ করলে ভবনের খানিকটা মাঠের ভেতরে পড়বে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোমবার সকালে মাদ্রাসা ভবনের নির্মাণের উদ্বোধন করতে যান। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। ঠিকাদারের লোকজন মাটি খননের চেষ্টা করলে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা খননযন্ত্রের সামনে শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজ স্থগিত ঘোষণা করে। বিকেলের দিকে ঠিকাদার লোকজন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে যান।

আমরা আশা করব, শতবর্ষী মাঠটি রক্ষায় প্রশাসন আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে। মাঠের জমি দখল নিয়ে আগে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। মাঠটির সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটিই কাম্য।