দখলমুক্ত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঘোরতর দ্বন্দ্ব থাকলেও জায়গাজমি দখলের প্রশ্নে তাঁরা যে ভীষণ রকম ঐক্যবদ্ধ, বিষয়টি আবারও নওগাঁর বনভূমির ক্ষেত্রে ধ্রুপদি সূত্রের মতো মিলে গেল। আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতা–কর্মীরা ও সাধারণ মানুষ সবাই মিলে ভাগেযোগে এই জেলার পাঁচ হাজার একর জমি বেদখল করেছেন। তার মানে হচ্ছে এ জেলায় কাগজে-কলমে ১৭ হাজার একর বনভূমি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে ৩ ভাগের ১ ভাগ বনের অস্তিত্ব এখন আর নেই।

অথচ এই তো ৫ জুন বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হলো। এবারের পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যে বাণী দিয়েছেন, সেখানে সুস্পষ্টভাবে বনভূমি রক্ষার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার উল্টোটাই দেখতে পাচ্ছি।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত ৬০ বছরে জেলার প্রায় ৫ হাজার একর বনের জমি বেদখলে চলে গেছে। দখলদারদের তালিকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষক ও সাধারণ মানুষও রয়েছেন। বনের জমিতে কেউ বসতি গড়েছেন, কেউ আমবাগান করেছেন, কেউবা করেছেন দোকানপাট আবার কেউবা চাষাবাদ করছেন। এখন দখলদারদের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৩। তাঁদের উচ্ছেদে বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার তালিকা দিলেও বড় ধরনের কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। জমি উদ্ধারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায়ই মামলাও করা হয়েছে। তবে সেগুলো যথারীতি ঝুলে আছে বছরের পর বছর।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ষাটের দশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে আসা দরিদ্র কিছু মানুষ বনের আশপাশে বসবাস করতে শুরু করেন। কালক্রমে তাঁদের অনেকেই বন বিভাগের অসাধু কর্মচারীদের সহায়তায় বনের জমিতে বাড়িঘর করেন। তবে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়, বনের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নানা সময় বনের জমি নিজেদের বলে জবরদখল করেছেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১৫ শতাংশ। কিন্তু নওগাঁর বনভূমির এমন দশা দেখেই ধারণা করে নেওয়া সম্ভব প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ আসলে কতটা। এ কথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসন নিশ্চিত করা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু উষ্ণায়ন ও মরুকরণের বিপর্যয় ঠেকাতে বনভূমি রক্ষা ও নতুন করে বনায়নের অন্য কোনো বিকল্পই আমাদের সামনে খোলা নেই।

নওগাঁর বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি দখলদারদের কাছ থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিন। বন বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে এ ক্ষেত্রে জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে।