দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনুন

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি-রায়পুর সড়কে দক্ষিণ আকালিয়া খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি এখন ভাঙা হচ্ছে। নির্মাণাধীন অবস্থাতেই সেতু ভেঙে ফেলার এই দৃশ্য আমাদের প্রকৌশল ব্যবস্থার গভীরতম সংকটের প্রতিচ্ছবি।

৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই সেতু এখন ত্রুটিপূর্ণ নকশা, ঢালাইয়ের ভুল ও প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে অপচয় ও অব্যবস্থাপনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আরও বিস্ময়কর হলো, এই অর্ধসমাপ্ত প্রকল্পের বিপরীতে ইতিমধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি অর্থের ব্যয় ঘটেছে, কিন্তু সেতু পায়নি জনগণ। উল্টো তা ভাঙার কারণে তাঁরা নতুন ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।

সরকারের উচিত হবে, এ ঘটনায় কঠোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কেবল তদন্ত কমিটি গঠন বা দায়সারা প্রতিবেদন নয়। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ রাষ্ট্রীয় অর্থ নিয়ে এমন প্রহসনের দুঃসাহস না দেখায়। 

এই ব্যর্থতার দায় কোনো একক প্রতিষ্ঠানের নয়। দায় বহন করতে হবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), প্রকল্প-সম্পৃক্ত প্রকৌশলী, তদারক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—সবাইকে। কাজের গুণমান যাচাই, নকশার অনুমোদন, বিল পাস—সবই যাঁদের দায়িত্ব ছিল, তাঁদের চোখের সামনে এমন নির্মাণত্রুটি কীভাবে ঘটল? রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত কোনো প্রকল্পে এমন গাফিলতি নিছক পেশাগত ভুল নয়। এটি দায়িত্ববোধের অবক্ষয় ও জবাবদিহিহীন প্রশাসনিক সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের মাত্র ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করেই বিপুল অঙ্কের বিল তুলে নিয়েছে। এরপর কাজ ফেলে চলে গেছে। নকশা ও নির্মাণের ত্রুটি যাঁরা অনুমোদন করেছেন, তাঁরা অপরাধের অংশীদার। প্রকল্পের অর্থ অপচয় মানে জনগণের রক্তঘাম উপার্জিত সম্পদের অপচয়। এটি অর্থনৈতিক দুর্নীতির পাশাপাশি নৈতিক বিপর্যয়ও বটে।

সরকারের উচিত হবে, এ ঘটনায় কঠোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কেবল তদন্ত কমিটি গঠন বা দায়সারা প্রতিবেদন নয়। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে আইনের আওতায় আনতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ রাষ্ট্রীয় অর্থ নিয়ে এমন প্রহসনের দুঃসাহস না দেখায়। 

সরকারকে বুঝতে হবে, একটি সেতুর পতন আসলে এক বৃহত্তর নৈতিক পতনের রূপক। দক্ষিণ আকালিয়ার এই সেতু শুধু ভেঙে যায়নি, এই ঘটনা ভেঙে দিয়েছে নাগরিক আস্থা, কৃষকের প্রত্যাশা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের মেরুদণ্ড। আজ যদি দায় নির্ধারণ ও দণ্ড নিশ্চিত না হয়, তবে কাল হয়তো ভাঙবে আরও বড় কিছু। আর তা হলো রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা।