প্রকৃত দোষীদের ধরা হোক

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে। অনেক পর্যটক ঘুরতে গিয়ে বাঘ দেখে সৌভাগ্যবানও হয়েছেন। কদিন আগে তিনটি বাঘের দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থানের কারণে বন বিভাগের এক ফাঁড়িতে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা। সুন্দরবনে বাঘের এমন উপস্থিতি অবশ্যই সুখবর।

ফলে বাঘের সংখ্যা কি বেড়েছে, এ জন্য অতিসত্বর বাঘশুমারি করা দরকার। আশার কথা হলো, চার বছর পর জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনে বাঘশুমারি শুরু হয়েছে। এর জন্য গোটা সুন্দরবন এলাকায় গাছে গাছে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, আটটি ক্যামেরা চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এর দায়ে ১৪ জন জেলেকে আটক দেখিয়ে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। যদিও জেলেদের পরিবারের দাবি, তঁারা নির্দোষ। বন বিভাগের ব্যর্থতার দায় জেলেদের ওপর চাপানো হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুমারির জন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকার গাছে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২৭৬টি ও খুলনা রেঞ্জে ৫৪টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা বসানো হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভয়ারণ্য নোটাবেঁকি ও দোবেঁকি এলাকা থেকে আটটি ক্যামেরা চুরি হয়ে যায়।

এখন ক্যামেরা লাগানো শুরু হয়েছে ১ জানুয়ারি থেকে। বন বিভাগ ক্যামেরা চুরির বিষয়টি জানতে পারে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বিষয়টি বন বিভাগ কিছুটা গোপন করেছে বলা যায়। এত দিন পর গত মঙ্গল ও বুধবার ১৪ জন জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। জেলেদের পরিবার দাবি করেছে, মূল অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়ে বন বিভাগ নিরীহ জেলেদের মামলায় ফাঁসাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বাঘ, হরিণ কিংবা অন্য বন্য প্রাণী জেলেরা হত্যা করেন না। এ জন্য আলাদা একাধিক চক্র আছে। তারা ক্যামেরা চুরি করে থাকতে পারে। অথচ অন্যায়ভাবে নিরীহ জেলেদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেলেদের মূলত গ্রেপ্তার করা হয় অভয়ারণ্যে ঢুকে কাঁকড়া ও মাছ ধরার অভিযোগে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্যামেরা চুরির মামলা দেওয়া হয়। বন বিভাগের বক্তব্য, তাঁদের নৌকায় ক্যামেরার ভাঙা যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে। প্রতিবছর অবৈধভাবে কাঁকড়া ও মাছ ধরার অভিযোগে অন্তত দুই-তিন শ জেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘুষ নিয়ে, জরিমানার শাস্তি দিয়ে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়, আবার অনেককে আদালতে তোলা হয়।

এখন ক্যামেরা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার জেলেদের পরিবারের দাবি, বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই তাঁরা বনে ঢুকেছেন। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, ক্যামেরা চুরির সঙ্গে জেলেদের চেয়েও আরও বড় কোনো গোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে। বিশেষ করে যারা সুন্দরবনে প্রাণী শিকার ও হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাদের আড়াল করতে বা ধরতে ব্যর্থ হয়ে কি জেলেদের ধরা হয়েছে?

 আমরা আশা করব, পুরো ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের ধরা হোক।