চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। একে তো কর্মসংস্থানের সংকট, বাড়ছে বেকারত্ব, তরুণেরা আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন; এর মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থায় ও নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারি আমরা দেখেছিলাম। সেটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলেও এখনো এর চক্রগুলো সক্রিয় আছে, দিনাজপুরের একটি নিয়োগ পরীক্ষায় তা স্পষ্ট হলো। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক।
গত শনিবার দিনাজপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এক প্রার্থীকে আটক করা হয়। তাঁর কানের ভেতর লুকানো ক্ষুদ্রাকৃতির ডিভাইস আর গেঞ্জির সঙ্গে সাঁটানো ট্রান্সমিটার। তাঁকে আটকের পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। জানা যাচ্ছে, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের সেট নম্বর জানতে চাওয়া থেকে শুরু করে উত্তর প্রস্তুত করা এবং ডিভাইসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তা পরীক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লেগেছে।
ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে জানান, শনিবার দিনাজপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অন্তত ৫৫ জন ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলেন। চক্রটির সঙ্গে দিনাজপুরের বিভিন্ন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জড়িত। প্রশাসনেরও কেউ কেউ যুক্ত থাকতে পারেন। কারণ, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী সময় মৌখিক পরীক্ষায় পাস করানোর ব্যবস্থা তাঁরা করবেন বলে চুক্তি হয়। এ ধাপে প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে চক্রটি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নেয়।
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। আর সেই শিক্ষকেরা এমন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তি কোথায় দাঁড়াবে? পুলিশ প্রশাসন পরীক্ষা হল থেকে পরীক্ষার্থী এবং পরে দুই শিক্ষককে ডিভাইস, চুক্তিপত্র, প্রবেশপত্রসহ আটক করেছে। এটি প্রমাণ করে, যথাযথ তৎপরতার মাধ্যমে এমন জালিয়াতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এটি বড় একটি চক্র। আমরা পুরো চক্রটি ধরতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান শুরু করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের যথাযথ আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।’ আমরা তাঁদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আন্দোলন শুরুই হয়েছিল চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমন জালিয়াতি সেই বৈষম্যকে আরও বেশি প্রকট করে তোলে। সেই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তি কর্মস্থলে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তার ঘটায়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে গোটা চক্রকে ধরতে হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে তথা শর্ষের মধ্যে যে ভূত লুকিয়ে আছে; তাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।