অসচ্ছল শিল্পীরা সহায়তা থেকে কেন বঞ্চিত

সম্পাদকীয়

একসময় দাপটের সঙ্গে শিল্পসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থেকে পরে আর্থিক অনটন, অসুস্থতার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন, এমন অনেক শিল্পীর কথাই আমরা জানি। এমন করুণ বাস্তবতায় তাঁদের নাম হয়ে যায় তখন দুস্থ শিল্পী। সরকার থেকে অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। বিষয়টিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক আকার দিতে প্রায় দুই বছর আগে বাংলাদেশ শিল্পীকল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল। ট্রাস্টের তহবিলে বিপুল অঙ্কের টাকা জমে হলেও সেখান থেকে এখনো কেউ সহায়তা পাচ্ছেন না। ফলে ট্রাস্ট গঠনের মূল উদ্দেশ্যই এখানে ব্যাহত হচ্ছে।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কল্যাণ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়। এর জন্য বিধিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, এ ট্রাস্টের কার্যাবলি হচ্ছে, অসচ্ছল শিল্পীদের কল্যাণসাধন, শিল্পীদের কল্যাণার্থে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন, পেশাগত কাজ করতে অক্ষম-অসমর্থ শিল্পীকে আর্থিক সাহায্য, অসুস্থ শিল্পীর চিকিৎসার ব্যবস্থা বা আর্থিক সাহায্য, দুর্ঘটনায় কোনো শিল্পীর মৃত্যু হলে পরিবারকে সাহায্য।

এ ছাড়া শিল্পকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা এবং শিল্পীদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য এককালীন মঞ্জুরি, বৃত্তি প্রদান।

কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, তিন দফায় শিল্পীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি ও শিল্পকর্মের বিশেষ অবদানের জন্য দুজনকে এমফিল বৃত্তি দেওয়া হলেও অন্য কার্যাবলির ব্যাপারে এই ট্রাস্ট অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত ট্রাস্টটির তহবিলে জমা আছে ৩৫ কোটি টাকা। সেই অর্থ অসচ্ছল শিল্পী বা সংস্কৃতিসেবীদের কোনো কাজেই আসছে না। তাঁদের আর্থিক সহায়তার জন্য গত প্রায় দুই বছরে একটিও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি ট্রাস্ট থেকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যে কাজে এই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, সেই কাজই হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে, ট্রাস্টের নীতিমালা এখনো অসম্পূর্ণ। বিধিমালায়ও আছে দুর্বলতা। জনবলও নেই। এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধান করার পর অসচ্ছল শিল্পীদের অর্থসহায়তার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তবে নীতিমালা অসম্পূর্ণ ও বিধিমালায় দুর্বলতা থাকলেও দেওয়া হয়েছে শিক্ষাবৃত্তি ও এমফিল বৃত্তি। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে রয়েছে অস্পষ্টতা।

দেশে অনেক অসচ্ছল শিল্পী আছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই জানেন না ট্রাস্টে তাঁদের জন্য টাকা বরাদ্দ আছে। নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাস্টে টাকা বরাদ্দ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়া উচিত। নীতিমালায় দুর্বলতা থাকলে দ্রুতই তা সমাধান করে অসচ্ছল শিল্পীদের সহযোগিতার অর্থ তাঁদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হোক।

আমরা আশা করব, শিল্পীকল্যাণ ট্রাস্টকে কার্যকর করে তুলতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবার আন্তরিক হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গেই ট্রাস্টের বরাদ্দ অসচ্ছল শিল্পীদের কল্যাণে খরচ করা হবে, সেটিই নিশ্চিত করা হোক।