রহস্য ভেদ করা জরুরি

সম্পাদকীয়

একজন নির্যাতিত নারী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে কিংবা পরীক্ষা করাতে এসে অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার রহস্যভেদ জরুরি। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, খুলনার একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির এক ছাত্রী শনিবার রাত সোয়া ১১টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন। তাঁর পরিবার চিকিৎসকদের অভিযোগ করে বলেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে অবস্থিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন। 

তরুণীর পরিবার থেকে জানানো হয়, মামলা করার উদ্দেশ্যে ওই তরুণী ওসিসি থেকে প্রতিবেদন নিতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওসিসির সামনে আগে থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১০ থেকে ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণী ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই সময় তাঁদের সংস্থার সদস্যদেরও মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। 

তবে রোববার রাতে যে মাইক্রোবাসে করে তরুণীকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেই মাইক্রোবাসে করেই তিনি থানায় আসেন। সেখানে তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করা হয়নি। আমি আমার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে গিয়েছিলাম।’ এরপর তরুণী ও গাজী তৌহিদুজ্জামানকে সোনাডাঙ্গা থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখানে বিবেচনায় নেওয়ার বিষয় হচ্ছে সেই তরুণী কোথায় আছেন, এখন কেউ তা বলতে পারছেন না। 

এই ঘটনার সঙ্গে তৌহিদুজ্জামানের সম্পর্ক কী? তিনি যদি দলবল নিয়ে অপহরণ না–ও করে থাকেন, তাহলে তিনি হাসপাতাল থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে গেলেন কেন? জরুরি তথ্যটি হচ্ছে, তৌহিদুজ্জামান অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই। আর তরুণীকে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনো বলপ্রয়োগের বিষয় না থাকে, তাহলে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সদস্যদের মারধর করা হলো কেন? 

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ওসিসির সমন্বয়কারী সুমন রায় বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করেছেন গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা। ওই পরীক্ষায় যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পরে তা প্রতিবেদন আকারে জমা দেবেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।

আমরা মনে করি, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে এক তরুণীর হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আসা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। পুরো ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগটি এসেছে, তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তির বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে ধর্ষণের অভিযোগ এনে যে তরুণী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসতে পারেন, তিনি কেন ঘটনার পর লাপাত্তা হয়ে যাবেন? তরুণীটি কোথায় আছেন এবং তিনি ভয়ে লুকিয়ে আছেন কি না, তা বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, মেয়েটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব উদ্যোগ নিতে হবে। 

আমরা মনে করি, ঘটনাটির একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। মেয়েটির যে ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে। আমরা আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এবং ঘটনার রহস্য ভেদ করবে।