স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়

সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামে গ্রামে বিরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা বেশ আলোচিত। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এসব বিরোধ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার বিষয়বস্তুও হয়ে ওঠে। তবে এ বিরোধের কারণে যে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি হয়, সেটি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার একটি গ্রামে তেমন একটি বিরোধ চলছিল ৩০ বছর ধরে। তবে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করে দিয়েছে। এতে গ্রামের লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার রোয়াইবাড়ি ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের এক ব্যক্তি ৩০ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে ওই ব্যক্তি পরাজিত হওয়ার পর গ্রামে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। এর পর থেকে পক্ষ দুটির মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, জমি দখল ও তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তিন দশক ধরে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর এবং মামলা-মোকদ্দমা।

তিন দশক ধরে গ্রামের দুই পক্ষের বিরোধে সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকায় স্থবিরতা নেমে এসেছিল। এ বিরোধ মেটাতে নানা সময় চেষ্টা করে গেছেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু প্রতিবারই তাঁরা ব্যর্থ হন। সম্প্রতি আবারও দুই পক্ষ সংঘর্ষের ঘোষণা দিয়েছিল এবং পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে উভয় পক্ষের লোকজন বিপুল দেশি অস্ত্রও মজুত করেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে সংঘর্ষের জন্য নির্ধারিত আগের দিন মধ্যরাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নিয়ে গ্রামটিতে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে। পরে ইউএনও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় উভয় পক্ষকে নিয়ে সংহতি সভার আহ্বান জানান।

কয়েক দিন পর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দুই পক্ষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত সেই সংহতি সভায় ছিলেন উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা। জমিজমা বিরোধের নিষ্পত্তি, মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পন্নসহ কয়েকটি শর্তে দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা ঘটে। দুই পক্ষই প্রতিশ্রুতি দেয় তারা আর কোনো সংঘর্ষে জড়াবে না। দুই পক্ষের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা বুকে বুক মিলিয়ে হিংসা, ঝগড়া-বিদ্বেষের অবসান ঘটান। এ সময় আনন্দ ও অনুতাপে তাঁরা অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। উপস্থিত অর্ধশতাধিক গ্রামবাসীর মুখেও হাসি ফোটে।

৩০ বছর ধরে চলে আসা একটি বিরোধ নিষ্পন্ন করে দারুণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ জন্য তাদের প্রতি আমাদের অভিবাদন রইল। আমরা আশা করব, গ্রামটিতে শান্তি বিরাজ থাকবে। বিরোধ মীমাংসায় প্রশাসনের এমন উদ্যোগ অন্যান্য উপজেলায় চলমান বিরোধগুলোর অবসানে অনুপ্রেরণা হোক।