স্বাস্থ্য বিভাগ কী জবাব দেবে

করোনা মহামারির সময় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) একটা শয্যার জন্য মানুষের আহাজারি আমরা দেখেছি। একটি আইসিইউ শয্যার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও সে সময় ঘটেছে। সেই চরম দুর্যোগের সময়ও জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে তালাবদ্ধ ছিল আইসিইউ কক্ষ। বিষয়টি একই সঙ্গে খুবই হতাশার ও দুঃখজনক।

দেশের জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে দামি দামি যন্ত্রপাতি পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এমনকি যে বাক্সে করে যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছে, সেই বাক্সই খোলা হয়নি এবং সেই অবস্থাতেই পড়ে থাকতে থাকতে অকেজো হয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমে এসবের খবর বের হলেও আমাদের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো বোধোদয় হয় না। বিষয়টা যেন এমন, কেনাকাটা যেহেতু শেষ, ফলে সেই যন্ত্রপাতি কাজে এল কি এল না, তাতে কারও কিছু আসে যায় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারির শেষে প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউটির উদ্বোধন করেন। আর এ বছরের এপ্রিলে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি দল সরেজমিনে দেখে ঘোষণা দেয় যে আইসিইউ ইউনিটটির সব সরঞ্জাম বিকল হয়ে গেছে। মাঝখানের এ সময়টায় তালাবদ্ধই ছিল আইসিইউটি।

হাসপাতালটিতে অপর আরেকটি আইসিইউ কক্ষের সরঞ্জাম ভালো থাকলেও সেটির সেবা কার্যক্রম চালু নেই। ফলে দুটি আইসিইউ কক্ষ থেকেও সেখান থেকে কোনো সেবা নিতে না পারে চরমভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন জামালপুরের সংকটাপন্ন রোগীরা। তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করতে হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই পথে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। জামালপুরের আইসিইউ ইউনিট দুটি চালু থাকলে বেঁচে অনেক রোগীর প্রাণ। অনেক পরিবারকে হারাতে হতো না তাদের প্রিয়জনকে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কাছে এ দেশের মানুষের অসহায়ত্বের শেষ নেই। নয়তো আট বছরেও কেন একটি আইসিইউ ইউনিটে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বহীনতার কারণেই আইসিইউর কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে গেছে। তাঁর দাবি, নানা সময়ে আলোচনা করেও আইসিইউটি চালু করতে পারেননি তাঁরা। তিনি বিপুল টাকার যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

কথা হচ্ছে, আসলেই কি এ ঘটনার জন্য কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে? সেটি যদি করাও হয়, এর প্রতিবেদন কি কখনো আলোর মুখ দেখবে? কারও বিরুদ্ধে কি আসলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে? দেখা যাক স্বাস্থ্য বিভাগ এখন কী করে। একটার সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেল, আরেকটা আইসিইউ অন্তত এবার চালু করুন।