জেলেদের সচেতন করার উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

কক্সবাজারের রামু উপজেলার হিমছড়ি সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের পানিতে ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের মৃত একটি ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছে। প্রথম আলোর খবর বলছে, দুই সপ্তাহ আগে শরীরে রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে ডলফিনটি মারা পড়েছে।

আতঙ্কের খবর হলো, ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন প্রজাতির মোট চারটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর মধ্যে দুটি ছিল ইরাবতী ডলফিন। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বঙ্গোপসাগরে এই প্রজাতির ডলফিনের বাস। ছয়জন কিংবা এর চেয়েও ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ইরাবতী ডলফিন ঘুরে বেড়ায়। খুব দ্রুত সাঁতারও কাটতে পারে না, তাই চেষ্টা করে জলযান থেকে দূরে থাকতে। এই প্রজাতির ডলফিনের সংখ্যা এখন ঠিক কত, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সামুদ্রিক জীবগুলোর মধ্যে ইরাবতী ডলফিনও বিপন্ন প্রজাতির। এমন প্রেক্ষাপটে একটি ডলফিনের মৃত্যুও অনেক বড় ক্ষতি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়মিত বিরতিতে আমরা ডলফিনের মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকেরা বছর দুয়েক আগে ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করেন। তাঁদের ওই গবেষণাপত্র একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় ছাপাও হয়। তাঁরা ডলফিনের মৃত্যুর জন্য বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেন। কারণগুলো হলো আঘাত, শ্বাসরোধ, হত্যা ও পরিবেশদূষণ।

গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া প্রথম আলোকে বলেন, উপকূলের কাছাকাছি নৌযানের আঘাতে ডলফিন মারা যায়। ডলফিনের চামড়ার নিচে কোনো মাংসপেশি নেই, শুধু চর্বির স্তর থাকে। ফলে আঘাত লাগলে সারে না, সংক্রমণে দ্রুত মারা যায়। তেল, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদির কারণে দূষণ থেকেও ডলফিন মারা যাচ্ছে। আর আমাদের উপকূলে প্রায়ই গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় ডলফিনের মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। জেলেরা যখন সাগরে জাল ফেলেন, তখন মাঝেমধ্যে ডলফিন আটকা পড়ে যায়। বেশির ভাগ সময় জেলেরা ডলফিনকে জাল থেকে বের করার উদ্যোগ নেন না।

ডলফিন শ্বাস নেয় পানির উপরিভাগ থেকে, তাদের ধারালো দাঁত না থাকায় জাল ছিঁড়ে বের হতে পারে না। একবার জালে আটকা পড়লে মিনিট বিশেকের মধ্যেই মারা যায়। কোনো কোনো সময় জেলেরা ডলফিনের শ্বাসরোধ করে বা পিটিয়েও হত্যা করেন। ডলফিনের চর্বি গলানো তেল কবিরাজেরা ওষুধ বানিয়ে বিক্রি করেন। ফলে প্রায়ই ডলফিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

গবেষকেরা বলছেন, যাঁরা সাগরে মাছ ধরতে যান, তাঁদের অনেকেই ডলফিন যে বিপন্নপ্রায় এবং সেগুলো যে রক্ষা করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে অবহিত নন। বিশ্বজুড়ে ডলফিন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। আমরা আইন প্রণয়নে ওস্তাদ। তাই নির্দিষ্ট প্রজাতির ডলফিন ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমাদের দৌড় ওই ঘোষণা পর্যন্তই। আমরা জেলেদের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরির কোনো উদ্যোগই নিইনি। আমরা আশা করব, ডলফিন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে।