ধান গবেষণায় তাঁর অবদান স্বীকৃতি পাক

সম্পাদকীয়

কৃষক হচ্ছেন প্রকৃতির প্রকৃত ছাত্র। জমিই হচ্ছে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্র। আর ফসলের বীজ হচ্ছে তাঁর নিজস্ব অক্ষর। সেই অক্ষরে যে ভাষা বোনা হয়, সেটিই হলো ফসল। ফলে সেই অক্ষরই তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ। দুঃখজনক হচ্ছে, সেই সম্পদ আজ কৃষকদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাজার অর্থনীতি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে হারিয়ে গেছে এ অঞ্চলের অসংখ্য ফসলের বীজ।

এরপরও আমরা দেখি দেশি বীজ রক্ষায় ঘরে ঘরে বীজভান্ডার গড়ে তুলেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার চার ইউনিয়নের নারীরা। এর বাইরেও আছেন সেন্টু কুমার হাজংয়ের মতো ধান–গবেষক। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী চাটকিয়া গ্রামের এই কৃষক প্রায় দেড় যুগ ধরে একের পর এক ধানের বীজ উপহার দিচ্ছেন চাষিদের।

সেসব ধান চাষ করে কৃষকেরা লাভবানও হচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো মনোযোগই নেই। ফলে সেন্টু কুমারের মেলেনি কোনো স্বীকৃতিও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাড়ির আঙিনায় ছোট একটি গবেষণাগার তৈরি করেছেন কৃষক সেন্টু হাজং। সেখানে বসে দেশি জাতের ধানের সঙ্গে অন্য একটি দেশি জাতের সংকরায়ণ ও পরাগায়ন করে নতুন নতুন ধানের সন্ধান দিচ্ছেন তিনি। এভাবে গত ১৭ বছরে তিনি উদ্ভাবন করেছেন ২৩টি নতুন ধরনের ধান।

সেখানে এমন ধানও আছে, যা চাষ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। এমন ধান এ বছর শুধু এই উপজেলায় সাড়ে ছয় হাজার একর জমিতে হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নিঃসন্দেহে এটি বিশাল একটি ঘটনা। এটি শুধু একটি বীজের ক্ষেত্রে। সেন্টু কুমারের অন্যান্য ধান চাষ করেও এমন সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। আমরা সেন্টু হাজংকে অভিবাদন জানাই।

নিজের এ গবেষণা এবং এর সাফল্য নিয়ে সেন্টু হাজং বলেন, ‘এ কাজে আগ্রহ ও অনেক ধৈর্য লাগে। ধান নিয়ে পড়ে থাকায় প্রথম প্রথম লোকজন এটাকে পাগলামি মনে করতেন। এখন কৃষকেরা দারুণ খুশি। নতুন ধরনের ধান নিয়ে আসা অনেকটা নেশার মতো হয়ে গেছে। কৃষক তাঁর ধান চাষ করে যখন লাভবান হন, তখন তাঁর দারুণ লাগে।’

আমাদের কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আছে কৃষি বিভাগ। আছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকেন্দ্র।

আমরা আশা করব, সেন্টু হাজংয়ের এই গবেষণাকে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এর ফলে তাঁর উদ্ভাবিত ধানবীজ গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। স্বীকৃতি পাবে তাঁর অবদানও।