আরও অনিশ্চিত হলো অংশগ্রহণমূলক ভোট

সম্পাদকীয়

অপর তিন সিটি নির্বাচনের মতো বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনেও বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ধারণা করা গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ হেসেখেলেই নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও দেখা যাচ্ছে, তাদের জোরজবরদস্তির আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

গাজীপুরে অঘটন ঘটেছে, বরিশালেও ঘটল নির্বাচনের দিন। বিশেষ করে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিম ২২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা চালান এবং এতে তিনি রক্তাক্ত হন। পরে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া কেবল বরিশালে সীমিত থাকেনি। ইসলামী আন্দোলন ঘোষিত ফল প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি বর্জন করায় সিটি নির্বাচন তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না।

বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। বরিশালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। খুলনার সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন এবং ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।

ভোটের এই বিশাল ব্যবধান সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দলের নেতা-কর্মীরা সম্ভবত বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারছিল না। বরিশাল সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা আবুল খায়েরের সমর্থনে মাঠে নামেননি। কেন্দ্রীয় নেতারা শতচেষ্টা করেও চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব মেটাতে না পারায় দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ভর করেছিল। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলা যেন তারই বহিঃপ্রকাশ।

নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। অথচ আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, তারা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আক্রান্ত মেয়র প্রার্থীর প্রতি সহানুভূতি দেখানোর বদলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল যে মন্তব্য করেছেন, তা নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছু নয়। সিইসি প্রশ্ন রেখেছেন, তিনি (ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন?

 সিইসি বলেছেন, আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে একজন মেয়র প্রার্থীর আহত হওয়া কি আনন্দমুখর পরিবেশের পরিচয়? ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে সদলবল। অথচ মঙ্গলবার এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত একজন আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এমনিতেই সিটি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না। ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এটিকে আরও প্রতিযোগিতাহীনতার দিকে ঠেলে দেবে। নির্বাচন মানেই হলো পছন্দসই প্রার্থী বা প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার উন্মুক্ত সুযোগ। সেটাই যখন হলো না, তখন সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

নির্বাচন কমিশনের প্রথম ব্যর্থতা হলো তারা সব দলকে এই নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারেনি, যদিও ভোটটি হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়ে।

দ্বিতীয়ত, যারা এসেছিল, তাদেরও ধরে রাখতে পারেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। নির্বাচন কমিশনের কথা ও কাজের অমিলটাও ধরা পড়ল প্রকটভাবে।