এই পরোপকারী ব্যক্তিকে অভিনন্দন

সম্পাদকীয়

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনসংখ্যার চাপের কারণে সমস্যাবহুল শহর এখন রাজধানী ঢাকা। সেসব সমস্যা ও অ্যবস্থাপনার প্রতিফলনই আমরা দেখি নানা সময়ে নানা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। তখন ঢাকাকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা সরব হন।

যদিও কয়েক দিনেই তা মিলিয়ে যায়। তবে অনেকটা আলোচনার বাইরে এমন একটি সমস্যা হচ্ছে পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগারের অপ্রতুলতা। কয়েক কোটি মানুষের এ শহরে যে পরিমাণ গণশৌচাগার থাকার কথা, তা নেই। সিটি করপোরেশন এই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা থাকলেও তারা সেই অর্থে মনোযোগী নয়।

তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন ঢাকার উত্তরার মো. আরিফ বেপারী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনা মূল্যে একটি গণশৌচাগার চালাচ্ছেন তিনি, তা-ও ২৩ বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে হাজার হাজার মানুষ তাঁর সেবা নিয়েছেন। এমন জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড বর্তমান সময়ে বিরল।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে আরিফ বেপারীর নিজের মার্কেট আছে। সেই মার্কেটের নিচতলায় তিনি তিনটি শৌচাগার তৈরি করে তা সবার জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন। সেখানে রয়েছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও পুরুষদের গোসল করার আলাদা স্থান।

মার্কেটটির কাছেই আরিফের নিজের বাড়ি। শৌচাগারের সামনে একটি সাইনবোর্ডও লাগিয়েছেন তিনি, যেখানে লেখা আছে, ফ্রি পাবলিক টয়লেট; খাওয়ার পানি, গোসল ও অজুখানার সুব্যবস্থা আছে। সেখানে আরিফের নাম ও মুঠোফোন নম্বরও রয়েছে। সেই সাইনবোর্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আরিফের এই জনসেবার বিষয়টিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ তাঁকে ফোন করছেন।

জীবনের একটা সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন আরিফ বেপারী। বিদেশে গণশৌচাগারের গুরুত্ব তিনি দেখেছেন। দেশে এসে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলেন, এমন একটি বিষয় কতটা জরুরি। সেই ভাবনা থেকে এ গণশৌচাগার চালু করেন। সেখানে সাবান, পানিসহ যা যা লাগে, সবই দেওয়া আছে।

গণশৌচাগার চালু নিয়ে অনেকের কাছ থেকে অনেক বাজে কথাও শুনতে হয়েছে ও এখনো শুনতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি নিজে মানুষের নোংরা করে রেখে যাওয়া শৌচাগার পরিষ্কার করেন, তা কেউ মানতে পারেন না।

তবে কাজটা তিনি মনের আনন্দের জন্যই করেন। এর জন্য কোনো কর্মী বা আলাদা কোনো মানুষও রাখেননি তিনি। নতুন সড়ক হওয়ায় শৌচাগারের অবস্থা ভালো নয়। এর উন্নয়নের জন্যও কাজ করছেন তিনি।

যে কাজ সিটি করপোরেশনের করার কথা, সেটিই কেন করতে হচ্ছে একজন নাগরিককে, সেই প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এটিও বলতে হয়, এমন পরোপকারী ও নিঃস্বার্থ মানুষ আছে বলে আমাদের সমাজটা এখনো সুন্দর। আমরা আরিফ বেপারীকে অভিনন্দন জানাই।