চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদাসীন কেন

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রী ধর্ষণচেষ্টা বা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বারবার খবরের শিরোনাম হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ পেলেও এ নিয়ে অনেকটা নির্বিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে পাঁচ তরুণের হাতে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হয়েছেন। অভিযুক্তদের এখনো শনাক্ত করা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা একই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। ক্যাম্পাসেই যদি ছাত্রদের হাতে ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তাহলে গভীর উদ্বেগ বিষয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এ ঘটনায় ঘটে। অভিযোগ অনুসারে, পাঁচ তরুণ ওই ছাত্রীকে বেঁধে ফেলে তাঁর গায়ের কাপড় খুলে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়।

পরে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ রেখে দিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেন ওই যুবকেরা। প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, এ ঘটনা গুরুতর। জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেল থাকলেও সেটির কার্যক্রম অনেকটা স্থবিরই বলা চলে।

প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই সেলের বিষয়ে জানে না। এ সেলে এখন পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ জমা হলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি তারা। এমনকি একটি অভিযোগ চার বছর ধরে ঝুলে আছে। ২০১৮ সাল থেকে সেলের বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়, যার আহ্বায়ক হচ্ছেন উপাচার্য শিরীণ আখতার, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম নারী উপাচার্য। অথচ তাঁর দায়িত্বকালে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগের কোনো সুরাহা না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।

গত রোববারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটছে। শুধু ক্যাম্পাসের ভেতরেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও ছাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

গত জুন ও এপ্রিল মাসে শাটল ট্রেনে বহিরাগত ব্যক্তিদের দ্বারা দুই ছাত্রী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন। এমন সব ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি যেভাবেই হোক তাদের নিশ্চিত করতে হবে।