ঢাকা শহরে যে ৫০টি থানা এলাকা আছে, তার সব কটিতে অপরাধ তথা খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও হানাহানির মাত্রা এক নয়। কোথাও বেশি, কোথাও কম। ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তেজগাঁও অঞ্চলে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদকের কারবার সর্বাধিক বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১ বছর ৫ মাস পর ২০২৫ সালের জুনে দেখা যাচ্ছে অপরাধে টেক্কা দিয়েছে রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের চার থানা—যথাক্রমে আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ।
এসব এলাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ নতুন করে বিভিন্ন অপরাধী চক্র গড়ে ওঠা। সরেজমিন অনুসন্ধানে আদাবর, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগে এমন অন্তত অর্ধশত অপরাধী দল সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ আগস্টের পর ১০ মাসে এসব অপরাধী দলের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত ১১ জন।
পুলিশ ও র্যাবের দেওয়া তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের পর এ চারটি থানা এলাকা থেকে মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হত্যায় জড়িত অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এত বেশি ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও অপরাধ না কমার কারণ কী? প্রথমত, দ্রুততম সময়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা আবার অপরাধে জড়াচ্ছে। এরা চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারের সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি অপরাধী দল ‘অ্যালেক্স ইমন’ ও ‘ডাইল্লা’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং নাছির বিশ্বাস ও মুন্না নামের দুই তরুণ নিহত হন। অ্যালেক্স ইমন গ্রুপকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল প্রশ্রয় দেন। জোড়া খুনের মামলায়ও পিচ্চি হেলালকে আসামি করা হয়েছে।
হাজারীবাগের জাফরাবাদে গত ১৫ মে গভীর রাতে একটি পরিবারের সাতজনকে কুপিয়েছে ‘পাটালি গ্রুপ’ নামের একটি অপরাধী গ্রুপের সদস্যরা। ওই ঘরের বাসিন্দারা এখন ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ কীভাবে নিরাপদ বোধ করবেন? পুলিশের বাইরে র্যাব, বিজিবি ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। মাঝেমধ্যে এসব এলাকায় অভিযানও চলে।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অপরাধীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা জেলখানা থেকে বেরিয়ে এসে কেবল নতুন করে অপরাধ করছেন না, থানায় মামলা দায়েরকারীদের ওপরও প্রতিশোধ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটা ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর থানা–পুলিশ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিল। এ কারণে সে সময় অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাস পরও একই দোহাই দেওয়া যাবে না। আর অপরাধ কেবল উল্লিখিত চার থানায় ঘটেছে, তা নয়; ঢাকার সব এলাকায়ই কমবেশি অপরাধী চক্র সক্রিয়। এক এলাকার অপরাধীদের অন্য এলাকায় ভাড়া খাটতেও দেখা যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রতি মাসেই থানায় বৈঠক হয়। কিন্তু সেসব বৈঠকের ফলোআপ যদি না থাকে, থানায় মামলা কম দেখিয়ে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখানোর চেষ্টা থাকে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না। আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। এখানে কারও প্রতি রাগ বা অনুরাগ দেখানোর সুযোগ নেই।