সুন্দরবনে এ অপকর্ম কবে বন্ধ হবে

সম্পাদকীয়

আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতির ঐতিহ্যের সবেধন নীলমণি সুন্দরবন। সেই সুন্দরবনই দক্ষিণাঞ্চলকে বছরের পর বছর বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে। একসময় কক্সবাজার উপকূলেও ছিল একটি সুন্দরবন। পরিবেশকে গুরুত্ব না দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ধুম তুলে সেই সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। যার কারণে কক্সবাজার উপকূল আজ অরক্ষিত। এখন খুলনার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি।

বন বিভাগ, সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, চোরাকারবারি সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে একেবারে জেলে-মৌয়াল পর্যন্ত—সবাই প্রকৃতির এই আধারের দিন দিন নানাভাবে ক্ষতি করে যাচ্ছেন।

সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গহিন বনের ভেতরে বিভিন্ন খালে বিষ ছিটিয়ে চিংড়ি মারা হচ্ছে। শুঁটকি তৈরির জন্য জায়গা করতে গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব কারও অজানা নয়। প্রায় সময় সংবাদমাধ্যমে একশ্রেণির জেলের এমন অপকর্মের খবর উঠে আসছে। কিন্তু কোনোভাবেই তাঁদের থামানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বন্য প্রাণী এবং নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় গত ১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে সব ধরনের অনুমতি বন্ধ রেখেছে বন বিভাগ। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এরপরও বনের নানা এলাকায় ঢুকে খালের মধ্যে বিষ ছিটিয়ে দিচ্ছেন একশ্রেণির জেলে।

চিংড়ি মারতে গিয়ে বিষ ঢেলে তাঁরা সেখানকার অন্যান্য জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস করে ফেলছেন। বিষ দিয়ে মারা চিংড়ি পাইকারি আড়তে বিক্রি করা যায় না বলে জেলেরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে বনের আরও বেশি ক্ষতি করে ফেলছেন। বনের মধ্যে মাচা করে আগুনের তাপে চিংড়ি শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে কৌশলে শহরে পাঠাচ্ছেন। সেই শুঁটকি তৈরি করতে কাটা হচ্ছে বনের সুন্দরী, পশুর, গেওয়াসহ অনেক প্রজাতির গাছ।

বন বিভাগ ও পুলিশের অভিযানে গত দেড় মাসে সুন্দরবন থেকে বিষ দিয়ে ধরা সহস্রাধিক কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা চিংড়ির পরিমাণই বলছে, কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অসাধু এই জেলে চক্র। চিংড়ি শুকানোর অনেক স্থানও চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

কিন্তু জড়িত ব্যক্তি ও জেলেদের গ্রেপ্তার নেই বললেই চলে। শুধু অভিযান চালিয়ে ভয়াবহ এই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড কখনো বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলেপাড়ায় জোরালো সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালানো উচিত বলে আমরা মনে করি।

এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের জীবিকা নির্বাহের দিকেও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি খাদ্যসহায়তা বা অনুদান বাড়াতে হবে। এই প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ রক্ষায় জেলেদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।