তাহেরপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবকে অভিবাদন

বয়স্ক মানুষের ছানি পড়াসহ চোখের নানা সমস্যার চিকিৎসার জন্য একসময় গ্রামে গ্রামে চক্ষুশিবির হতো। বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার কারণে উপকৃত হতেন গরিব ও দুস্থ মানুষ। এখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের প্রসারতায় আগের মতো সেই চক্ষুশিবির দেখা যায় না। তাই বলে এর প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়েছে? ফুরায়নি বলেই এখনো তাহেরপুর রিক্রিয়েশন ক্লাব এমন চক্ষুশিবিরের আয়োজন করে যাচ্ছে। রাজশাহীর বাগমারার সংগঠনটি ৪৪ বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৯ সাল থেকে ক্লাবটির এ কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের সহযোগিতা করে রাজশাহী লায়ন্স ক্লাব। সর্বশেষ গত ২৭ মে আয়োজন করা হয়েছিল বড় পরিসরে বিনা মূল্যে চক্ষুশিবিরের। রোগীদের শ্রেণিবিভাগ করে প্রাথমিক চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র, ওষুধ ও চশমা সরবরাহ করা হয়। চোখে লেন্স লাগাতে আড়াই হাজার টাকা এবং নেত্রনালির অস্ত্রোপচারে প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এ জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা বহন করে ক্লাব। অর্থসংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে সাতবার চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। 

তাহেরপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবের চক্ষুশিবিরের ফলে অনেক অসহায় মানুষ চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্করা এখানে উপকৃত হচ্ছেন বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারে বয়স্করা অবহেলিত থাকেন। চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে অনেকে পারেন না। তাঁদের জন্য সহায় হয়ে ওঠে তখন ক্লাবের এই চক্ষুশিবির। এখন পর্যন্ত চার হাজার অসহায় মানুষ বিনা মূল্য চোখে অস্ত্রোপচার-সুবিধা পেয়েছেন। 

উপজেলার তাহেরপুর বাজারের প্রবেশমুখে বারনই নদ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ক্লাবটি। এটি একটি অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন। তবে সব রাজনীতির, মতের, আদর্শের মানুষের মিলনস্থল সেটি। চিকিৎসাসেবা ছাড়াও নানা ধরনের সামাজিক সেবামূলক কাজ করে থাকে এই ক্লাব। নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানে ক্লাবটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আশির দশকের শুরুতে সরকারিভাবে নিবন্ধিত এ ক্লাব বলা যায়, সামাজিক সংগঠনচর্চার দীর্ঘ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সেখানে এমন পরিবারও আছে, যারা তিন প্রজন্ম ধরে ক্লাবের সদস্য। আশা করব, এই ক্লাব যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে এবং অসহায় মানুষকে সেবা দিয়ে যাবে। তাহেরপুর রিক্রিয়েশন ক্লাবকে এবং সেটির সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকদের অভিবাদন।