আট বছরেও কেন কাজ শেষ হয় না

সম্পাদকীয়

চট্টগ্রামের একটি উপকূলীয় উপজেলা আনোয়ারা। একদিকে শঙ্খ নদের ভাঙন, আরেক দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস। এতে ডুবে যায় আনোয়ারার উপকূল। বছরের পর বছর সেটি ঘটে আসছে। মানুষের দুর্দশাও ঘুচছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড উপকূল রক্ষায় একটি প্রকল্প নিয়েছিল। ভুক্তভোগী মানুষেরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেই প্রকল্পের কাজ চলছে, শেষ হয় না। দেশে ধীরগতির প্রকল্প বাস্তবায়নের আরেকটি উদাহরণই তৈরি হচ্ছে আনোয়ারা। বিষয়টি হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে আনোয়ারা ও পতেঙ্গা উপকূল রক্ষার জন্য ২৮০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় সরকার। তার মধ্যে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার জন্য ২৫০ কোটি আর পতেঙ্গার জন্য ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। ব্যয় বাড়তে বাড়তে ৫৭৭ কোটি টাকায় ঠেকে প্রকল্পের বরাদ্দ। তবে প্রায় আট বছর হয়ে গেলেও প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। পাউবোর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হতে আরও কত বছর সময় লাগবে?

বাকি থাকা কাজগুলোর মধ্যে আছে পরুয়াপাড়া থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত আট কিলোমিটার ইট বিছানো, জুঁইদণ্ডীতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ, তৈলারদ্বীপ এলাকায় ৩০০ মিটার সিসি ব্লক স্থাপন, গহিরা কোস্টগার্ড এলাকায় ৭৬০ মিটার বাঁধসহ সিসি ব্লক, বাইন্না দিঘি এলাকায় ৭১০ মিটার বাঁধসহ সিসি ব্লক স্থাপন।

প্রকল্পটি দেরি হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ করোনার সময়ে কাজের গতি কমে যাওয়া। এরপর তহবিল-সংকটের কারণে বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছরের জন্য। সরকার অনুমোদিত বরাদ্দের পরও কেন তহবিল-সংকট তৈরি হলো? পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই বা সম্ভাব্যতা যাচাই না করে কি তাহলে প্রকল্পটি নিয়েছিল পাউবো? আবার কাজের নিম্নমান নিয়ে স্থানীয় মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, যে বাঁধ তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, সেটি নিজে কতটা সুরক্ষিত থাকছে?

মার্চের শেষে আনোয়ারা উপকূল পরিদর্শনকালে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানও। সে সময় তিনি বলেন, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া কাজ এখনো শেষ না হওয়া সন্দেহজনক। জনগণের অর্থ ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু এত বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এমনকি অর্থ ব্যয় অনুপাতে কাজও হচ্ছে না।

আমরা আশা করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। নিম্নমানের কাজের অভিযোগও তদন্ত করা হবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী যে সন্দেহের কথা প্রকাশ করেছেন, সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হোক।