শাস্তি দিতে কেন এক বছর পার

সম্পাদকীয়

সরকারি চাকরি নিয়ে জনমনে একটি ধারণা হচ্ছে, কোনো দোষ বা অন্যায় করলেও সহজে শাস্তি হয় না, শাস্তি হলেও চাকরি যায় না। জবাবদিহি প্রদর্শনের চর্চা না থাকার কারণ সরকারি চাকরিরতরা অন্যায় করলেও অনেক সময় পার পেয়ে যাচ্ছেন, এই বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অনেকে সুযোগ পেয়ে বা সুযোগ নিয়ে এর অসদ্ব্যবহারও করছেন। যার একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আট দিনের ছুটি নিয়ে প্রায় এক বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলটিতে পাঠদানে একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, তাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেন। ছুটি শেষ হলেও কর্মস্থলে যোগ দেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে আর কোনো ছুটি না নিয়ে এখন পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। এতে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবীক্ষণ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই শিক্ষক যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া গত জুনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক স্কুল পরিদর্শনে গিয়েও বিষয়টি জানেন। তিনি তা এক প্রতিবেদনে মন্ত্রিপরিষদের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবহিত করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এরপরও জান্নাতুল ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রধান শিক্ষককে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য বারবার চিঠি পাঠানো বা কৈফিয়তপত্র দেওয়া—এসব করতে করতে এক বছর পার করে দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কথা হচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক প্রায় এক বছর ধরে অনুপস্থিত, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কেন এই দীর্ঘসূত্রতা? তাঁর প্রতি এমন ‘উদারতা প্রদর্শন’ প্রশ্ন তৈরি করে। জান্নাতুল ফেরদৌসী কোনোভাবেই শিক্ষকতার যোগ্যতা রাখেন না। তাঁকে এমন সুযোগ দিয়ে বাজে উদাহরণ তৈরি করার কোনো মানে হয় না।