রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করবে

সম্পাদকীয়

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না। বরং তা সংকটকে আরও গভীর করতে পারে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ছড়ানোর পর দলটির মহাসচিবসহ একের পর এক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

অনেক নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। যে মামলাতেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হোক না কেন, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের উদ্দেশ্য থেকেই যে তা করা হচ্ছে, সেটা কারও কাছেই অস্পষ্ট নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের এক দিন পরই প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমীর খসরু বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে দলটির যোগাযোগ রক্ষা করেন।

এ ছাড়া গত কয়েক দিনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তিন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মজিবর রহমান সরোয়ার ও খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ অন্তত ২০টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা করে এমন কোনো দলের ক্ষেত্রে অবধারিতভাবেই নেতৃত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে কর্মীদের পথভ্রষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। সেটা রাজনীতির জন্য ইতিবাচক না-ও হতে পারে।

আজ থেকে (৫ নভেম্বর) বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে। গত সপ্তাহে এক দিন হরতাল ও তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিল বিরোধী দলগুলো। হরতাল-অবরোধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় পুলিশ, বিএনপির কর্মী, সাধারণ মানুষসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ৮০টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ভেতরে কিছু গণপরিবহন চললেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কপথে রাজধানী কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। ব্যাহত হয়েছিল মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের মতো বৈশ্বিক কারণ এবং ডলার-সংকট, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার মতো অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের অর্থনীতি যখন নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সে সময় এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা যেমন অপ্রত্যাশিত, একই সঙ্গে অগ্রহণযোগ্য।

রাজনীতিতে সংলাপ, সমঝোতা ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ। সাধারণ মানুষকে সংকটে এবং অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে না ফেলে সেই পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। তবে সরকারি দলে যারা আছে, তাদের সেই দায়িত্ব বেশি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার সমঝোতার পরিবেশটাকেই ঘোলাটে করে তুলছে।

রাজনীতিতে সংঘাত, সহিংসতার পরিণতি কারও জন্যই ইতিবাচক হতে পারে না। সব পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।