দুই দলই চ্যালেঞ্জের মুখে

সম্পাদকীয়

উপজেলা নির্বাচনের প্রথমে ধাপে আজ ১৩৯টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে। ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, কয়েকটিকে স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে উৎসাহ–উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনে তার লেশমাত্র নেই।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও একই নীতি নিয়েছিল দলটি।

বিরোধী দলহীন এই নির্বাচন ইতিমধ্যে বেশ কিছু অঘটনের জন্ম দিয়েছে। অনেক উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো প্রার্থীর সমর্থকেরা প্রতিপক্ষকে যমনায় ডুবিয়ে মারার এবং হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। নির্বাচনের আগের দিন পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহিনুজ্জামানসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

একই জেলায় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক করার অভিযোগে এক শিক্ষক ও পাঁচজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রার্থী নিজেই যদি ভোট কেনার জন্য টাকা নিয়ে ঘোরেন এবং নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কোনো প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন, তাহলে নির্বাচনের দরকার কী।

উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের নির্বাচন না করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকে তা মানেননি। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের পদাধিকারীরাও।

এই নির্বাচনে ভোটারদের প্রার্থী বাছাই করার সুযোগ তেমন থাকছে না বলে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে; যা কেবল আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের নির্বাচনী ইতিহাসেও বিরল ও অভূতপূর্ব। স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে হয়ে আসছিল বহু বছর আগে থেকে। কিন্তু ২০১৫ সালে বিশেষজ্ঞদের আপত্তি উপেক্ষা করে এই নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে তৃণমূল পর্যায়ে সংঘাত সংঘর্ষ বেড়েছে। এবারে ক্ষমতাসীনেরা কৌশলগত কারণে দলীয় প্রতীক না দিলেও আইনটি এখনো বহাল। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে যখন নগণ্যসংখ্যক দল নির্বাচনে অংশ নেয়, তখন এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে আসতে না পারা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের উৎকোচ প্রদানসহ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের যেসব গুরুতর অভিযোগ এসেছে, কমিশনের উচিত হবে সেগুলো সুষ্ঠু তদন্তসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। আইনি বাধ্যবাধকতার কথা বলে তারা গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।

এবার উপজেলা নির্বাচন দুই প্রধান দলের নেতৃত্বকে বিরাট চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এটা নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের ব্যর্থতা। আবার বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলীয় সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে। প্রথম ধাপে ৭২ জন বহিষ্কৃত হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপির অব্যাহত নির্বাচন বর্জন নীতির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।