দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

আইনে বনের সীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল না করার সুস্পষ্ট বিধি থাকার পরও তার তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলের সখীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে পাঁচটি করাতকল গড়ে উঠেছে। সেসব করাতকলে বন থেকে কাটা গাছ চেরাই হচ্ছে। বেআইনিভাবে যাঁরা করাতকল চালাচ্ছেন, তাঁরা কি ধরেই নিয়েছেন, আইন তঁাদের জন্য নয়?

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, করাতকলের মালিকেরা কৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশীদার করে নিয়েছেন। তাতে করে স্থানীয় বন বিভাগ অবৈধ এসব করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। আমরা মনে করি, এটি নিশ্চিতভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধভাবে করাতকল চালানোর কৌশল।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, দুই বছর আগে নলুয়া বিটের আওতায় কমপক্ষে ১০টি অবৈধ করাতকল গড়ে ওঠে। বছরখানেক আগে স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ওই সব করাতকল উচ্ছেদ করে। এর কিছুদিন পর অবৈধ করাতকলের মালিকেরা কৌশল করে উচ্ছেদ ও মামলা থেকে বাঁচতে যৌথ মালিকানায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। করাতকলের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধার করাতকল’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশীদার করার বিষয়টি নামমাত্র। করাতকলের মালিকেরা প্রতি মাসে তাঁদের সামান্য কিছু লভ্যাংশ দিচ্ছেন। এই কৌশলে তাঁরা বনের গাছ উজাড় করছেন। প্রতিটি করাতকলে দৈনিক গড়ে ২০০ ঘনফুট কাঠ চেরাই করা হচ্ছে। এ হিসাবে পাঁচটি করাতকলে মাসে ৩০ হাজার ঘনফুট এবং বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট কাঠ চেরাই করা হচ্ছে। এসব কাঠ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে বা তাঁদের সামনে রেখে যাঁরা এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন, তাঁরা একদিকে যেমন আইনবিরোধী কাজ করছেন, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদেরও অসম্মান করছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো. ওসমান গনি যথার্থই বলেছেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে যাঁরা অবৈধভাবে করাতকল চালাচ্ছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে মুক্তিযোদ্ধাদেরই অসম্মান করছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী আশ্বাস দিয়েছেন, উপজেলার সব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। আমরা আশা করি, খুব দ্রুতই অবৈধ এসব করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।