অন্তর হতে বিদ্বেষ–বিষ নাশো

সম্পাদকীয়

আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ২০২৩ বছর আগে জেরুজালেমের কাছাকাছি বেথলেহেম নগরীর এক গোয়ালঘরে আজকের দিনে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক হজরত ঈসা (আ.), যিনি যিশু নামে পরিচিত।

বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায় আজ সোমবার দিনটি উদ্‌যাপন করছে। এই উদ্‌যাপন আনন্দময়। এই আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যিশুর শান্তির বাণী। কারণ, মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে জন্মেছিলেন যিশু। হিংসা, বিদ্বেষ, পঙ্কিলতার পথ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন ভালোবাসা, করুণা, মিলন ও সুন্দরের পথ।

মহান যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করে গেছেন, তা সর্বকালে জাতিধর্ম-নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর শান্তির বাণী শাশ্বত। তিনি আশাহীন মানুষকে দিয়েছেন আশা; জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষকে জুগিয়েছেন জীবনজয়ের অনুপ্রেরণা।

যুদ্ধ ও অশান্তির বিপরীতে তিনি মানুষকে ডেকেছেন মমতা, ভালোবাসা ও মিলনের পথে। এর জন্য যিশুকে দুঃসহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু সত্য ও কল্যাণের পথ থেকে কোনো কিছুই তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি। নিপীড়কের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা আঘাতের কথা বলেননি; তিনি অকাতরে ক্ষমা করেছেন, আর সমগ্র মানবজাতির হয়ে সব দুঃখ-যন্ত্রণা যেন একাই আত্মস্থ করতে চেয়েছেন। তাই অমানবিকতাকে জয় করে প্রকৃত মানব হয়ে ওঠার জন্য যিশুর শিক্ষা বিরাট পাথেয়।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাজার চাঙা হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে চলে উৎসবের নানা আয়োজন। কিন্তু এ বছর যখন বড়দিন উদ্‌যাপিত হচ্ছে, তখন বিশ্বব্যাপী অশান্তির কালো ছায়া। বিশেষ করে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন, তাদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি নারী ও শিশুরা। এ ঘটনা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিলেও জাতিসংঘ যুদ্ধ বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ভেটো দিয়ে আসছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও সেখানকার বেসামরিক নাগরিকেরা হতাহত হচ্ছেন, যাঁদের অধিকাংশ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। এ থেকে শিক্ষণীয় হচ্ছে, কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, অন্তরে ধারণ করলেই যিশুর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো হবে।

আসুন, আমরা সব হিংসা ও ভেদাভেদ ভুলে যিশুর শান্তির বাণীকে অন্তরে ধারণ করি। যিশু পৃথিবীতে এসেছিলেন শান্তির বাণী নিয়ে, বর্তমান বিশ্বের যাঁরা রাষ্ট্রনেতা, তাঁরা যে ধর্মেরই অনুসারী হোন না কেন, শান্তির সেই আহ্বান অগ্রাহ্য করতে পারেন না।

বড়দিন বা যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র জন্মতিথিতে আমরা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানাই। যিশুর সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার শিক্ষা হোক সবার পাথেয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, অন্তর হতে বিদ্বেষ–বিষ নাশো। শুভ বড়দিন।