মুদ্দত আলীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

দেশের নদী, খাল, জলাশয়, পাহাড়, বন—সবকিছুই দখলে চলে যাচ্ছে। দিন দিন কমছে বনভূমি। দুঃখজনক হচ্ছে, প্রকৃতিবিনাশী এসব কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা যুক্ত হতে দেখি সরকারি কর্তৃপক্ষকেও। সেই উৎসাহে কম যান না সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও। যেমন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে বন বিভাগের ভূমি দখল করে রেখেছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মুদ্দত আলী। শুধু বন দখলই নয়; সেখানকার মাটি, ছড়ার বালু ও গাছপালা বিক্রি করে আর্থিকভাবেও বিত্তশালী হয়েছেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেই অর্থ খরচ করেন বলেও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮০-৮২ সালে বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়নে স্থাপিত হয় ১ হাজার ৯৬৩ একর আয়তনের রূপাইছড়া রবারবাগান। এটি দেশের অন্যতম রবারবাগান, যা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের আওতাধীন। কিন্তু ১৭ বছর ধরে বাগানটির প্রায় ২৪ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মুদ্দত আলী, যিনি হবিগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি। বনের জায়গা দখল করে তিনি গড়ে তুলেছেন একের পর এক প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে আছে ক্ষতিকারক ব্যাটারি থেকে সিসা খোলার কারখানাও। তাঁর এমন দখলবাজি ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়ে চিঠিও দিয়েছে বন বিভাগ। কিন্তু ক্ষমতা ও অর্থবলে ঠিকই এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, মুদ্দত আলীর দখলবাজির কারণে ইতিমধ্যে রবারবাগানের দুটি টিলাও বিলীন হয়ে গেছে। প্রশাসন অভিযোগের সত্যতা পেয়েও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রবারবাগান কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, মুদ্দত আলী প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গে কোনোভাবেই পেরে উঠছেন না তঁারা। তাঁদের প্রতিনিয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। যে কারণে থানায় জিডিও করা হয়। অন্যদিকে সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে মুদ্দত আলীর দাবি, তিনি সরকারি কোনো ভূমি দখল করেননি। ক্রয়সূত্রেই তিনি এসব জমির মালিক। যদিও দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

আমরা জানতে পারছি, স্থানীয় প্রশাসন, ভূমি অফিস ও থানার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মুদ্দত আলী। তাঁর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল, সেটি আমরা দেখছি না। বিষয়টি আমাদের একই সঙ্গে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে। আমাদের প্রশ্ন, একজন মুদ্দত আলী কি প্রশাসনের চেয়েও বেশি শক্তিশালী?