হামলাকারীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন

সম্পাদকীয়

প্রথমে নাটোরে গুপ্ত হামলার খবর এল। এরপর নওগাঁ ও রাজশাহীতে হামলা হলো। সর্বশেষ চট্টগ্রাম থেকেও গুপ্ত হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গুপ্ত হামলার শিকার বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী। সবশেষে ঢাকা ও যশোরে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশি অভিযান ও তল্লাশির ভয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এ অবস্থায় গুপ্ত হামলার ঘটনা জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করেছে।

হামলার শিকার ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, বেশির ভাগ ঘটনা রাতে ও নির্জন রাস্তায় ঘটেছে। মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে এসে মুখোশধারী ব্যক্তিরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে, কুপিয়ে, হাত-পায়ের রগ কেটে, গুলি চালিয়ে গুরুতর জখম করছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত নয়টার দিকে অটোরিকশায় করে নওগাঁ শহরের রজাকপুর এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে ইয়াদ আলীর মোড়ে হামলা চালানো হলে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল আহমেদ মারা যান। এর আগে রাজশাহীতে গুপ্ত হামলার ঘটনায় এক চিকিৎসক ও এক পল্লিচিকিৎসক মারা যান।

গত দুই মাসে নওগাঁ জেলার তিন উপজেলায় পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে বিএনপি-জামায়াতের চার নেতা-কর্মী আহত হন। নাটোরে এক মাসে ১০টি এবং রাজশাহীতে ৩টি ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যত তৎপর, এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পুরো উল্টো।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করতেও ভয় পায়। যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলা করে আর কী হবে? মামলা করলে পুলিশ ব্যবস্থা তো নেবেই না, উল্টো হামলাকারীদের আরও আক্রোশের শিকার হব।’

প্রথম আলোর খবরে আরও বলা হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় গত ২০ দিনে চার বিএনপি নেতার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় একদল মুখোশধারী। প্রতিটি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ধরন একই। চারটি ঘটনাতেই গভীর রাত কিংবা ভোরের দিকে মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা এসে তিন নেতার বাড়িতে ও এক নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর তারা জাহাজের সিগন্যাল লাইট, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও ভাঙচুর চালায়।

ভুক্তভোগীদের দাবি, যখন গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটে, তখন পুলিশ এর আশপাশেই ছিল। তাদের ছত্রচ্ছায়াতেই এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত মানুষ থানা-পুলিশের কাছে প্রতিকার চাওয়ার কথা। সেখানে খোদ পুলিশই যদি অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পাবেন কীভাবে? অভিযোগটি গুরুতর এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে।

বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলায় সারা দেশে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এই নিশ্ছিদ্র পাহারার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত হামলা এবং ঢাকা ও যশোরে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের বাসায় ১৫টি এবং ঢাকায় কারাবন্দী নেতা মির্জা আব্বাসের বাড়িতে ২টি ককটেল হামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মী হলেই তাদের ওপর গুপ্ত হামলা হবে, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চুপচাপ বসে থাকবেন, এটা কী ধরনের কথা। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, তাহলে তাদের উচিত হবে প্রতিটি ঘটনায় গুপ্ত হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা।