দাউদকান্দির সেতুটি দ্রুত সংস্কার করুন

সম্পাদকীয়

বলা হয়ে থাকে, কোনো একটি এলাকায় উন্নয়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে একটি সড়ক বা সেতু নির্মাণ। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে একটি সেতু কী করে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে, এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না আশা করি।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পেছনে কোনো না কোনো সেতুর নাম উঠে আসেই। আবার সেতু নির্মাণ নিয়েও নানা অনিয়ম আমরা দেখি। এখনো নির্মাণ হওয়ার পর এক দিনও ব্যবহার না হওয়া সেতুর দেখা মেলে।

রাস্তাহীন সেসব সেতু নিয়ে কয় দিন পরপরই সংবাদমাধ্যমে খবর হয়। চাহিদা না থাকলেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে সেতু হয়ে যায় কোথাও কোথাও। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে থাকে।

এর ফলে মানুষের ভোগান্তি তো ঘটেই, আবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে। এমন একটি সেতুর দেখা পাচ্ছি আমরা কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার খামারপাড়ায়। সেখানকার খিরাই নদের ওপর নির্মিত বেইলি সেতুর কয়েকটি স্থানে এমনভাবে পাটাতন ভেঙে গেছে যে সেখানে রীতিমতো মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে।

দাউদকান্দির পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চল, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলাকে যুক্ত করতে ২০০১ সালে খিরাই নদের ওপর সেতুটি নির্মিত হয়। এর মধ্য দিয়ে কয়েকটি উপজেলার লাখো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এর এখন বেহাল।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। পাটাতন ভেঙে আলগা হয়ে নিচের দিকে ঝুলে রয়েছে। মরিচা ধরে পাটাতনগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে, যেকোনো সময় ছিটকে নদে পড়ে যেতে পারে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ভারী যানবাহন তো দূরের কথা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। যেকোনো মুহূর্তে সেতু ভেঙে পড়ে কি না, এমন আশঙ্কায় থাকেন চালক ও যাত্রীরা।

এ বেইলি সেতু অতিক্রম করতে গিয়ে দেবে যাওয়া পাটাতনে আটকে নিয়মিত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। লোকজনও আহত হচ্ছে। পাটাতন ভেঙে গাড়িসহ নদে পড়ে যাওয়াটাই এখন বাকি আছে।

আমরা চাই না এমন কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটুক। যানবাহনের চালকদের সতর্ক করতে গাছের ডালের সঙ্গে লাল কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। অথচ সেখানে সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেতুটির সংস্কার নিয়ে তৎপরতা চালালেও তা যথেষ্ট নয়।

এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা কার্যালয়ের বক্তব্য, সেতুটি সরেজমিনে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশা করি, তারা কালক্ষেপণ না করেই পদক্ষেপ নেবে। সেতুটি দ্রুত সংস্কার করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হোক।