অবহেলা ও অযত্নের দিন শেষ হোক

সম্পাদকীয়

গতকাল সোমবার ছিল জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দেশে ২০১৭ সালে এ দিবস পালনের সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়। জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে, দেশব্যাপী দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে।

কিন্তু দিবসটি এলে আমরা বরং দেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জীর্ণ দশাই দেখতে পাই। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির ক্ষেত্রে। একসময়ের ভোলার জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র এ গ্রন্থাগার এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় কোনোভাবে টিকে আছে। গ্রন্থাগারটির এমন করুণ দশা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯২৬ সালে তৎকালীন মুসলিম যুবসমাজ এ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিল। দেশি-বিদেশি লেখকদের বিখ্যাত সব বই নিয়ে এই গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে একসময় কলকাতা থেকে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক, মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক সাময়িকীও আসত। শত শত পাঠকে গমগম করত গ্রন্থাগারটি। সেই গ্রন্থাগার এখন পাঠকশূন্য।

একটি দ্বিতল ভবনে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম চলছে। প্রবেশদ্বারের দুই পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। ভবনের ভেতরেও ঝোলানো রয়েছে একাধিক ফেস্টুন ও ব্যানার। ভবনের নিচতলার পুরোটা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভবনের আশপাশে টিনের ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের প্রাচীর ভেঙে দোকানঘর তোলা হয়েছে। একটি গ্রন্থাগারের যে পরিবেশ থাকা দরকার, সেটি সেখানে আর অবশিষ্ট নেই।

গ্রন্থাগারে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলাম ধর্ম, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ নানা বিষয়ের পাঁচ হাজার বই আছে। এসব বই ১২টি আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু আলমারিগুলো তালাবদ্ধ। গ্রন্থাগারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও কেউ নেই। পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক মো. লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, আলমারিগুলো তালাবদ্ধ রাখাই ‘নিয়ম’। নিরাপত্তার স্বার্থে তালা মারা হয়েছে। কেউ বই চাইলে তালা খুলে দেওয়া হয়।

ভোলা মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘মুসলিম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে কী হয়, তা-ই আমি জানি না। আমি গ্রন্থাগারটি পূর্ণাঙ্গভাবে করতে যা যা দরকার, তা-ই করব।’ আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই। পাবলিক লাইব্রেরিটিকে আবারও পুরোদমে চালু করা হোক।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মুদ্রিত বইয়ের পাঠক কমে গেছে, এটি বড় একটি বাস্তবতা। এরপরও আমাদের সমাজে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব হারিয়ে যায়নি। পাঠক টানার জন্য কর্তৃপক্ষ চাইলে নানা সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। ভোলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্রও হতে পারে এ গ্রন্থাগার। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।