রেললাইনে পাথর থাকাটা ট্রেন চলাচলের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বিষয়টি সাদাচোখে বুঝতে পারেন না। রেললাইনে পাথর বিছানো থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে ট্রেনের ভারসাম্য বজায় রাখা। রেললাইনে কাঠের স্লিপার থাকলে বৃষ্টির কারণে সেগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।
আবার কংক্রিটের স্লিপার মজবুত ও টেকসই হলেও ট্রেনের চাপ বা ঘর্ষণের সময় সেগুলো সরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ক্ষেত্রে পাথর থাকার কারণে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি এড়ানো যায়। কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথরের অভাবের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী রেলস্টেশনের আশপাশের রেললাইনে তেমনটি আমরা দেখছি। সেখানকার রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকার কারণে চলাচল করার সময় বগিসহ ট্রেন বিপজ্জনকভাবে দুলতে থাকে। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সেখানে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত পাথর না থাকার কারণে গৌরীপুর থেকে ভৈরব পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো স্থানে রেললাইন একেবারে পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে। যেমন সোহাগী রেলস্টেশনের কিছুটা দক্ষিণে একটি রেলক্রসিংয়ের দুই পাশের রেললাইনে কোনো পাথর নেই। কোনো কোনো জায়গায় রেললাইন মাটিতে দেবে গেছে।
আবার কোনো কোনো জায়গায় রেললাইনের নিচে পর্যাপ্ত পাথর না থাকায় লাইন সমতল থেকে কিছুটা উঁচু হয়ে রয়েছে। ফলে ট্রেন চলাচলের সময় লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। কয়েক মাস আগে দ্রুতগতির ট্রেন বিজয় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুতও হয়েছিল।
রেললাইনে পাথর না থাকলে সেখানে ঘাস-লতাগুল্ম গজিয়ে ওঠে, যা রেল চলাচলকে ঝুঁকিতে ফেলে। ঈশ্বরগঞ্জের রেললাইনের অনেক জায়গা ও আশপাশে ছোটখাটো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
এখন সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না। রেলওয়ের ময়মনসিংহ জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকারও স্বীকার করেছেন, সেখানকার ৮০ কিলোমিটার রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পাথর নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করব, পর্যাপ্ত পাথর ফেলে ঈশ্বরগঞ্জের রেললাইন সংস্কার করা হবে। সেখানকার মানুষ তাঁদের রেলযাত্রা নিয়ে শঙ্কিত। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সেখানকার রেল চলাচল নিরাপদ করা হোক।
এ ছাড়া সোহাগী রেলওয়ে স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো স্টেশনমাস্টার নেই। সেই পদটি শূন্য পড়ে আছে।
এ কারণে সোহাগী রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ। দিনে ও রাতে দুটি করে চারটি ট্রেন স্টেশনটি দিয়ে চলাচল করে। স্টেশনমাস্টার না থাকার কারণে স্টেশন তদারকি ও যাত্রীসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অবিলম্বে সেখানে স্টেশনমাস্টারের পদটি পূরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।