কর্তাব্যক্তিদের ঘুম ভাঙবে কি

সম্পাদকীয়

ট্রেনের টিকিটের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিকিট বুকিং অপারেটর সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অন্যদিকে উচ্চ আদালতও রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা, টিকিট কালোবাজারি ও ছাদে যাত্রী পরিবহন বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ ও ব্যাখ্যা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রেল কর্তৃপক্ষকে দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে আদালত ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ছাদের ওপর যাত্রী বহনের কারণে অনেক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে।

উল্লেখ্য, মহিউদ্দিন রনি রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান ধর্মঘট করছেন। তাঁর এ ছয় দফার মধ্যে আছে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা ও হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করা এবং অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া, ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রভৃতি। এর প্রতিটি দাবিই যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি।

রনি একা ঢাকায় আন্দোলন শুরু করলেও পরে এটি দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হন। রনির এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিও। গতকাল রাতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর রনি তাঁর আন্দোলন স্থগিত করেন।

এ আন্দোলন ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, যাত্রীসাধারণের স্বার্থে। তিনি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান নিলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তঁার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং তারা নানাভাবে হয়রানি করেছে। স্টেশনের গেটের ভেতরে অবস্থান নিতেও তারা বাধা দিয়েছে। তাদের এ মনোভাব কেবল অগ্রহণযোগ্য নয়, নিন্দনীয়ও।

রনির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, টিকিট কালোবাজারি বন্ধে যেকোনো সুপরামর্শ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তারা বলেছে, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রেল যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রীসেবা প্রদানে রেল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তা ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

তাদের ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাত্রীদের সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’-জাতীয় বক্তব্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকা ছাড়া কিছু নয়। রেলওয়েতে টিকিট কালোবাজারি নতুন নয়। অথচ কর্তৃপক্ষ তা বেমালুম চেপে গেছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মধ্যে সব সময়ই একটা দায় এড়ানোর প্রবণতা আছে। রেলওয়েতে যদি এতই আধুনিকায়ন হয়ে থাকে, তারা কেন শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছে না? এই রেলওয়ের কালো বিড়াল ধরতে গিয়ে একজন সাবেক মন্ত্রী নিজেই কালো বিড়ালের খপ্পরে পড়েছিলেন। তার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হলে রেলওয়ের সব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। রেলওয়ের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম আদৌ ভাঙবে কি?