উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা উন্নয়নেই ব্যয় করুন

সম্পাদকীয়

ময়মনসিংহ পৌরসভায় তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে কাজ হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের অর্থমূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা, মেয়াদ বাকি আছে দশ মাস। বোঝাই যাচ্ছে, প্রকল্পটি টাকা আগামী ১০ মাসে যাচ্ছেতাইভাবে খরচ হবে। কিন্তু দখল হয়ে থাকা রাস্তা আর ফুটপাত, জলাবদ্ধতা, খেলার মাঠের সংকট, মশার উপদ্রব, নোংরা আবর্জনায় বোঝাই হয়ে থাকা শহরের চেহারার কোনো বদল হবে না। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা পূরণে উদ্যোগ সামান্য।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা থেকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছে ২০১৮ সালে। আগে ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে ময়মনসিংহ পৌরসভা ছিল, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর যুক্ত হয় আরও ১২টি ওয়ার্ড। এলাকা বেড়েছে প্রায় চার গুণ। প্রকল্প বরাদ্দও এসেছে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা দেখেছেন, প্রকল্পের কাজ চলছে শম্বুকগতিতে।

একটি সড়কের কাজ তিন মাস ধরে বন্ধ, অপর একটি সড়কের কাজের জন্য পুরো সড়ক ২৫ দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষ হাঁটাচলা করতে পারছে না। বোঝাই যাচ্ছে, উন্নয়নকাজে অদক্ষতা ও জবাবদিহি না থাকলে যা হয়, তা-ই ঘটছে ময়মনসিংহে। আর এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মেয়র কেন নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক কোনো উদ্যোগ নেননি, সেই প্রশ্নের জবাব কি তিনি দেবেন?

কেন নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের খেয়াঘাট দিয়ে নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদ পেরিয়ে বালু মাড়িয়ে শহরে ঢুকতে হয়? সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এই মানুষগুলোর কী লাভ হলো? হোল্ডিং ট্যাক্স তো দিচ্ছেন, বিনিময়ে তাঁরা পাচ্ছেনটা কী? শহরে ইজি বাইকের দৌরাত্ম্যে হাঁটাচলা করা যায় না। বিশ্বের নবম ধীরগতির শহরে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ। এত ইজিবাইকের অনুমোদন কেন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, কার স্বার্থে?

ময়মনসিংহে এর আগেও যাঁরা পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরাও যে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন, তা নয়। বরং শহরের অবস্থা যে-কে সেই।

ময়মনসিংহে নাগরিক সমাজের এক প্রতিনিধির মনে ভয়, তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ ১০ মাসে খরচ করলে সেটা আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না। সন্দেহ নেই, প্রথম দু-চার মাস নগরীকে ঝাঁ-চকচকে দেখাবে, কিন্তু ভেতরের ‘সদরঘাট’ অবস্থা বেরিয়ে পড়বে অল্প কিছুদিন পরেই।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সিংহভাগ সরকারি কর্মকর্তাদের মতো জনবল-সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। তাঁদের কি কখনো জবাবদিহির আওতায় এনেছেন মেয়র? না তাঁরও এসব অব্যবস্থাপনায় সায় আছে। আমরা মনে করি, একটি নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবহুল ময়মনসিংহ এই অঞ্চলের নাগরিকদের প্রাপ্য। যেনতেনভাবে অর্থের অপচয় না করে যেন সত্যিই নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।