নীলফামারীতে এমন করুণ পরিস্থিতি কেন

সম্পাদকীয়

পাকা বিদ্যালয় ভবন। দেয়ালে সুন্দর কারুকাজ। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে সাতজন শিক্ষার্থী, সবাই মেয়ে। কারও মুখে কোনো হাসি নেই। অথচ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮১, যাদের অধিকাংশই এখন আর স্কুলে আসে না।

মেয়েদের সঙ্গে আছেন তাদের শিক্ষিকা। তিনিই প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র শিক্ষক। নীলফামারীর তিস্তাপারে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ফারহানা রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এটি। গত সোমবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত এ ছবি দেখলেও যে কারও মন বিষণ্ন হতে বাধ্য।

করোনা পরিস্থিতি এবং এরপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। যার প্রভাব পড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতেও। হাজিরা খাতায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর উল্লেখ থাকলেও, প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকে অল্প কয়েকজন। বাকিরা হয় অনিয়মিত, নয়তো ঝরে পড়েছে।

মেয়েদের কারও বাল্যবিবাহ হয়েছে, ছেলেদের অনেকে যুক্ত হয়ে পড়েছে শিশুশ্রমে। এমন পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শিক্ষক-সংকটের কারণে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের এখন আর স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন। দুই মাস আগে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক অবসরে যান। এক বছর আগে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান দুজন শিক্ষক।

এখন একা গোটা স্কুলের ঘানি টানছেন প্রতিমা রানী রায়। একাধারে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন, ক্লাস নেওয়া ও কর্মচারীর ভূমিকাও তিনিই পালন করেন। সকালে স্কুলের দরজা খুলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ক্লাস শেষে দরজা বন্ধ করা—একাই সবকিছু করছেন প্রতিমা রানী।

শিক্ষকের অভাবে ক্লাস না হওয়ায় স্কুলে আসাটাকে সময় নষ্ট মনে করে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জানাচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর আমাদের প্রচেষ্টা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষকসংকটের কারণে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, একে তো প্রত্যন্ত এলাকা, সেই সঙ্গে অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার কারণে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা এখানে থাকতে চান না। কাউকে বদলি করা হলে সেটিকে শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ডিমলার প্রাথমিক শিক্ষার একজন কর্মকর্তাও জানালেন, ইতিমধ্যে দুজনকে এ বিদ্যালয়ে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরাও নানা লবিং করে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে সংবাদ প্রকাশের পর অন্য স্কুলের একজন শিক্ষককে সেখানে অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিস্তাপারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এমন পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। শিক্ষার হার হ্রাস পেয়ে আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়বে এলাকাটি।

বিদ্যালয়টিতে অতি দ্রুত স্থায়ীভাবে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। সেখানকার সুধীজন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিদ্যালয়টির গতিশীল করতে স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকাও আমরা দেখতে চাই।