এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী

সম্পাদকীয়

যেদিন সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমার খবর এল, সেদিনই জানা গেল ডিএনএ প্রতিবেদনের অভাবে ৭৮৯ মামলার তদন্তকাজ আটকে আছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যে দুটি ল্যাব চালু ছিল, তার একটি এক মাস ধরে বন্ধ।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সিফাত-ই-নূর খানম প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতার ঘটনায় অনেক ভুক্তভোগী মেডিকেল পরীক্ষা দেরিতে করেন। অনেকে অজান্তে আলামত নষ্ট করে ফেলেন। ফলে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিএনএ পরীক্ষা অবশ্যই জরুরি।

২০২০ সালের সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩২-ক ধারায় বলা হয়, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও ওই ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। ২০০০ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ডিএনএ ও রাসায়নিক পরীক্ষার বিধান না থাকায় অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যেতেন।

হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলা তদন্তে ডিএনএ প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করার বিধানকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু প্রতিবছর এ ধরনের মামলার সংখ্যা বাড়লেও ডিএনএ পরীক্ষার সুযোগ বাড়েনি। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এত দিন ডিএনএ পরীক্ষা হতো ঢাকার মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে।

বর্তমানে সিআইডির ল্যাবটি চালু থাকলেও ঢাকা মেডিকেলের ল্যাবটি বন্ধ আছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিএনএ ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর পরিচালিত ল্যাবটিতে অর্থায়ন করে আসছিল ডেনমার্কের সহায়তা সংস্থা ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডানিডা)। কিন্তু তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চুক্তি শেষ হওয়ার পরও বিকল্প উৎস থেকে অর্থায়নের চেষ্টা করেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

এমন অবস্থায় বর্তমানে দেশে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাব সচল আছে, যাতে প্রতিদিন ২০টি নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলিং করা সম্ভব। ওই ল্যাবের দায়িত্বে থাকা বিশেষ পুলিশ সুপার ইমরান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বছরে তাঁদের কাছে ১০ হাজারের মতো মামলা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসে। প্রতিদিন আসা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩টির বেশি। এর ফলে ডিএনএ প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হচ্ছে।

এখানে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের বিষয়টি জড়িত। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিপুল সাফল্য আছে বলে নীতিনির্ধারকেরা দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ডিএনএ পরীক্ষার দুটি ল্যাবের একটি মাসখানেক বন্ধ থাকার পরও কর্তৃপক্ষের হুঁশ না ফেরা দুর্ভাগ্যজনক।

যে দেশে সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়, সেই দেশে অর্থের অভাবে ডিএনএ পরীক্ষার দুটি ল্যাবের একটি বন্ধ থাকবে, এটা কেমন কথা? বিদেশি সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ কেন বিকল্প ব্যবস্থা করল না? এই অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার জবাব কী।

হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতে ডিএনএ পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ল্যাবের অভাবে যদি তদন্ত আটকে থাকে কিংবা পরীক্ষায় অযথা বিলম্ব ঘটে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ বিষয়ে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।