ভাঙ্গা গোলচত্বরে কত দিন অন্ধকার থাকবে

সম্পাদকীয়

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৫ কিলোমিটার সড়ক নিয়ে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এই মহাসড়কের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থান হলো ভাঙ্গা গোলচত্বর। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশপথও সেটি। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে সব সড়কবাতি বন্ধ থাকে।

সন্ধ্যা হলেই স্থানটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তা-ও এক-দুই দিন না, টানা ৫০ দিন ধরে। বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় সেখানকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গোলচত্বরটিও ওভাবে পড়ে আছে। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

দর্শনীয় স্থানে পরিণত হওয়ায় ভাঙ্গা গোলচত্বরে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঘুরতে আসেন। এখন সন্ধ্যা নামলে সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। সড়কের এক পাশ থেকে আরেক পাশে দেখা যাচ্ছে না কিছুই। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক ও স্থানীয় লোকজনের।

নানা অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনার ফলে এক্সপ্রেসওয়েটি এমনিতে বেশ সমালোচিত এখন। বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহতের শিকার হচ্ছেন সেখানে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এভাবে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পড়ে থাকবে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

এক্সপ্রেসওয়েটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ আট মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিল পরিশোধ করেনি। ফলে জমে যাওয়া বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ টাকার বেশি। সাত দফা তাগাদা দিয়েও সেই বকেয়া আদায় করতে না পেরে সংযোগই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সওজের দাবি, বরাদ্দের টাকা না পাওয়ায় বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

ভুতুড়ে পরিবেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা করছে স্থানীয় পুলিশ। ফলে নিরাপদ যান ও যাত্রীদের চলাচল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে রাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সচল থাকা প্রয়োজন।

স্থানীয় নাগরিক সমাজের বক্তব্য, এমন একটি স্থাপনার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা এবং বিল না পাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া কাম্য নয়। এ-জাতীয় স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ আন্তমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে হওয়া উচিত।

এখন কথা হচ্ছে, ভাঙ্গা গোলচত্বর কি এভাবেই পড়ে থাকবে? এমন দৃষ্টিনন্দন একটি এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়ে কী লাভ হলো, যদি সেটির রক্ষণাবেক্ষণ করা না যায়, এর জন্য যথাসময়ে বরাদ্দ পাওয়া না যায়?

এভাবে গোলচত্বরটিকে নিরাপত্তাহীনতায় রেখে দেওয়ায় সেখানে কোনো দুর্ঘটনা বা অঘটন ঘটলে তার দায় সংশ্লিষ্টদেরই নিতে হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করলেও নানা ক্ষেত্রে অর্থ অপচয় কি থেমেছে?

বরং যেখানে অর্থের প্রয়োজন, সেখানে কোনো খবর নেই। আমরা আশা করব, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।