দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

অনিয়ম ও দুর্নীতি কতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ তার দৃষ্টান্ত হতে পারে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণত দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়ে বলে এমনিতেই সেগুলো অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। প্রয়োজনীয় শিক্ষক যেমন নেই, আবার ভবনগুলোও জরাজীর্ণ।

সরকারি হিসাবেই দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৭০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। এর মানে দশ ভাগের এক ভাগ বিদ্যালয়ে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনা চলছে। বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ যেখানে ২ শতাংশের নিচে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প পাস হতে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়, তা কারও অজানা নয়। কিন্তু এতটা কঠিন বাধা পেরিয়ে পাস হওয়া প্রকল্পের ভবন যখন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি হয়, সেটা যারপরনাই বেদনাদায়ক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি ও চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায় নড়িয়া উপজেলার ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতল ও তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এলজিইডি ভবনগুলোর নির্মাণকাজ করছে। ১৫টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, ১৪টির নির্মাণকাজ চলমান ও ৫টির কার্যাদেশ দেওয়া হলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। এর মধ্যে সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজে নানা ত্রুটির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণ করা স্কুল ভবনগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও দেয়াল, বিম ও মেঝেতে ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দরজা ও জানালায় নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদ থেকে পানি পড়ছে।

প্রশ্ন হলো, কোটি টাকা ব্যয় করে এই ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো দিয়ে আমরা কী করব? এত অভিযোগের পর নড়িয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা স্পষ্টতই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের পক্ষে সাফাই গাওয়া। তাঁর ভাষ্য, যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, তা ঠিকাদারেরা সংস্কার করে দিচ্ছেন।

স্কুলের কাজ শেষ হওয়ার পর মান বিচার করা হবে, এই বক্তব্যে যে শুভংকরের ফাঁকি আছে, তা বলা বাহুল্য। কেননা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গত জুন মাসে বুঝে নেওয়া বিদ্যালয় ভবনের ছাদ থেকে পানি পড়ে, মেঝের ঢালাই ও পলেস্তারা উঠে গেছে। আর এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অভিযোগ তোলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দেখে নেওয়ারও হুমকি’ দিয়েছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় এ নিয়ে তদন্ত করছে। এলজিইডিও তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল এলজিইডি যেভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাফাই গেয়ে পক্ষপাতমূলক বক্তব্য দিয়েছে, তাতে এই তদন্তে কতটা আস্থা রাখা সম্ভব?

আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এই অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। কোমলমতি শিশুদের জন্য স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।